পিতা মাতার আদরের ধন কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ) নিজের প্রাণের চেয়ে ও পিতা মাতাকে বেশী ভালবাসতেন পিতা মাতার আরাম আয়েশ সুখ শান্তির জন্য নিজের হাজার ও সুখকে বিসর্জন দিতে কাপন করতেন না। পিতা মাতার বিপদ দুঃখ কষ্টের সময় তাকে দেখে চেনাই যেতনা তার চেহারার মধ্যে পরিবর্তন এসে যেত।
যতক্ষন পর্যন্ত তাদের বিপদ আপদ দুঃখ কষ্ট লাঘব না হবে ততক্ষন পর্যন্ত তাকে বিষন্ন মনে হত। হযরত ফাতেমা (রাঃ) যেমনি ভাবে পিতা মাতাকে নিজের প্রাণের চেয়ে ভালবাসতেন তেমনি তার পিতা মাতাও তাকে তাদের প্রাণের চেয়ে ভালবাসতেন। যে মাতাকে তিনি নিজের প্রাণের চেয়ে ও বেশী ভালবাসতেন সেই মাতাকে হারিয়ে তিনি কতযে অসহায় হয়ে পড়লেন যা লিখনীর মাধ্যমে বর্ণনা করা যাবে না।
মাতাকে হারিয়ে তিনি কোথাও ও শান্তি খুজে পাচ্ছেন না। চারিদিকে শূন্য হাহাকার ।
মাতৃহারা আদরের কন্যাকে শান্তনা জানায়ে পিতা নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, মা ফাতিমা। তুমি এভাবে আর ভেঙ্গে পড়না “মা” তোমার মলিন চেহারা দেখলে আমি আর স্থির থাকতে পারিনা। আমার হৃদয়ের মধ্যে ও দুঃখ দাউদাউ করে জ্বলে উঠে ।
তুমি আর তোমার মাতার কথা মনে করে কাদিওনা। কেননা আমাকে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বলেছেন তোমার মাতা বেহেস্তের মধ্যে সুখে শান্তিতেই অবস্থান করিতেছেন। সত্যি পিতার পবিত্র মুখে পরো পরোলোকগতা মাতার বেহেশতে সুখে শান্তিতে অবস্থানের সংবাদ শুনে ফাতিমা (রাঃ)-এর মলিন মুখে হাসি ধরল।
নারী কুলের শিরমনি হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে হারানোর ব্যাথা প্রিয়নবী (সাঃ)-এর অন্তরে হর হামেশাই শোকের ঝড় বইতে ছিল। হযরত খাদিজার (রাঃ)-এর কথা মনে করা মাত্রই প্রিয় নবী (সাঃ)-এর দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি নেমে আসত। তবে তাঁর জন্য এত মায়া মমতা হওয়ার কারণ ছিল হযরত খাদীজা (রাঃ) তো শুধু তার প্রিয়তমায়ী ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিপদে আপদে সুখে দুঃখের এক মাত্র সঙ্গী সাথী ।
হযরত খাদিজা (রাঃ) প্রিয় নবীর জীবনের প্রতিটি ক্ষিত্রেই তিনি ছিলেন ছায়া বৃক্ষের মত। হযরত খাদীজা (রাঃ) বেঁচে থাকা অবস্থায় প্রিয়নবী (সাঃ) মনে করতেন তার একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু আছেন। কেননা সকল সমস্যা ও অভিযোগের কথা বলা মাত্রই সঠিক সমাধান পেতেন।
নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে খাদিজা (রাঃ) বন্ধুর মত "পরামর্শ দিতেন। ভগ্নির মত স্নেহ করতেন। যার করণেই প্রিয় নবী (সাঃ) পরমহিত কাঙ্খীনী জীবন সঙ্গিনীকে হারানোর ব্যাথা অন্তর হতে ভূলতে পারে না। যাই হোক এত দিনের হারানো ব্যাথা কিছুটা প্রশমিত হয়ে এসেছিল। কিন্তু নবুওয়াতের এই দশম বৎসরে প্রিয় নবীর জীবনে নেমে আসে আরেকটি শোকের ছায়া ।
অন্তর হতে একটি শোক ভূলতে না ভূলতেই আবার নেমে আসল শোকের কাল ছায়া । হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর পরলোক গমনের কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রিয় নবী (সাঃ)-এর স্নেহময় চাচা আবু তালিব ও দুনিয়া হতে বিদায় নিলেন । চাচা আবু তালিবের মৃত্যুতে প্রিয়নবী (সাঃ) দুনিয়ায় তার আপন বলতে আর কেহ নেই। সুখ দুঃখের কথা জানাবার মত আর কেহ দুনিয়ায় নেই ।
এতদিন প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সকল দিকের বাধা বিপত্তি ও আপদে বিপদে একমাত্র আশ্রয় স্থল এবং আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম প্রচারের একমাত্র সহায় ছিলেন তার স্নেহময় চাচা আবু তালিব। কিন্তু চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর পর তার সেই পরম নির্ভয় আশ্রয় স্থলটিও হারিয়ে গেল।
যার কারণেই আবু তালিবের মৃত্যুর পর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেকে খুবই অসহায় মনে করলেন। এদাকে তালিবের মৃত্যুর পরে তাদের আধিপত্য সর্ব ক্ষেত্রেই খাটাতে লাগলেন । প্রিয় নবী (সাঃ)-এর উপর নানা ধরণের অত্যাচার চালতে লাগলেন। পূর্বের চেয়ে জুলুম অত্যাচার শত গুণে বৃদ্ধি পেল ।
আবু তালিব জীবিত থাকা অবস্থায় তার ভয়ে নবী মুহাম্মদের (সাঃ)-এর প্রতি অধিক জুলুম অত্যাচার করতে সাহস পায়নি। কিন্তু আবু তালিবের মৃত্যুর পরে তাদের পথের কাটা সরে গেল যার কারণেই তারা অমানবিক অসহ্যনীয় নির্যাতন চালাতে লাগলেন।
এই মহা বিপদের সময় প্রিয় নবী (সাঃ) হযরত খাদীজা (রাঃ) ও চাচা আবু তালিবের কথা মনে করে নীরবে কাঁদত আর রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনার জন্য দু হাত তুলে প্রার্থনা করতেন।
মানবতার মহান শিক্ষক দয়ার আধার হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মহাবিপদের সময় নবী দুলালী খাতুনে জান্নত হযরত ফাতেমা (রাঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-এর জননীর মতই প্রতি মুহুর্তেই স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে তাকে শান্তনা দিতেন। যে শান্তনা তাকে বিপদ সহ্য করার মত অনুপ্রেরণা দিত এবং কর্ম ক্ষেত্রে উৎসাহ দিত।
হযরত ফাতেমা (রাঃ) পূর্বের চেয়েও আর বেশী করে পিতার সেবা ও খেদমত করতে চেষ্টা করতেন ।
ইয়াতীম নবী শৈশবে মাতাকে হারিয়ে যে দুঃখ বেদনা পেয়েছিলেন সত্যিই, আদরের দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর স্নেহ মায়া মমতা পেয়ে মনে হচ্ছিল যেন ফাতেমার মাঝেই তার হারানো মায়ের স্মৃতিকে দেখতে পায়।
হযরত ফাতেমা (রাঃ) তার আব্বজান প্রিয়নবী (সাঃ)-কে জননীর মতই সর্ব ক্ষেত্রে উপদেশ দিতেন শুধু উপদেশ নয় মায়া মমতার বন্ধনে তাকে আবদ্ধ রেখে অতীতের দুঃখ বেদানার দিন গুলির ব্যাথিত স্মৃতিকে হৃদয় হতে মুছে ফেলতে চেষ্টা করতেন ।
সত্যি! কথা বলতে হয় হযরত ফাতেমা (রাঃ) মায়া মমতা স্নেহ, ভালবাসা ও সেবা যত্নে প্রিয়নবী (সাঃ)এর মাতৃ আসন দখল করে প্রতিটি মুসলিম নরনারীর হৃদয়ে চির জাগ্রত হয়ে রয়েছে। কেননা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মত পিতার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় প্রিয় নবী (সাঃ) ঘর হতে বাইরে কোথাও গেলে ফিরে না আসা পর্যন্ত আদরের দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) মায়ের মতই দরজার পাশে এসে দাড়িয়ে যেতেন। রাত জেগে পিতাকে পাহাড়া দিতে ও তিনি কষ্ট বোধ করতেন না বরং মনে মনে ভাবতেন আল্লাহর নবীর খেদমত করতে পেরেছি বলে জীবন ধন্য ।
মাতা খাদিজাকে (রাঃ) হারাবার পর ফাতেমা (রাঃ) সর্ব ক্ষেত্রে পিতার খেদমত করতে বিশেষ ভাবে প্রস্তত থাকতেন । তার হৃদয়ে মায়ের কথাটি সর্বদা লুকোচুরি করত। মাতা সাহেবানী বলেছিলেন “হে ফাতিমা! আমি যখন থাকব না তখন তুমি আমার হয়ে তোমার আব্বাকে খেদমত করবে”। যার কারণেই হযরত ফাতেমা (রাঃ) মাতা সাহেবানীর কথাকে প্রতি পদে পদে স্মরণ করে চলতে চেষ্ট করেন ।
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শিক্ষা লাভ
নবী দূলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) বাল্য কালে পিতৃগৃহে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের কথা আলোচনা করার পূর্বে প্রসঙ্গ কারণেই তৎকালীন আবর জাহানের শিক্ষা, দীক্ষা, রীতি নীতি ও নিয়ম, কানুন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা অবশ্যই দেয়া উচিত। একথা বাস্তব সত্য কথা যে ইসলাম পূর্বে যুগে আবর জাহানে শিক্ষা, দীক্ষা ও কৃষ্টি সভ্যতা বলতে কিছুই ছিল না।
যার কারণে আরবের অধিকাংশ লোকই নিরক্ষর এবং মুর্খ ছিল। তৎকালে লেখাপড়াকে একটি ঘৃনা কাজ বলে ধারণা করা হত। তারা লেখাপড়াকে ঘৃনিত কাজ মনে করলেও মুখে মুখে কবিতা রচনা সাহিত্য চর্চা বংশের গৌরব সম্বলিত কবিতার ছন্দ তারা বলে বেড়াতো।
এসব ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্রতি যোগীতার আসর ও বসত। তবে এখানে উল্লেখ্য বিষয় হল তাদের এসব জ্ঞান গরিমার সবকিছুই ছিল তাদের কন্ঠস্থ। লিখনির মাধ্যমে ধরে রাখার কোন মাধ্যমই ছিলনা। এছাড়া প্রতি বছর কাসীদা কবিতার বংশ গৌরব দানশীলতা ইতিহাস আলোচনা ও অতিথি পরায়নতার প্রতিযোগীতা করার জন্য ঐতিহাসিক ওকাজ এবং যুল মাজ্জান্নাতে মেলা বসত ।
তবে এই প্রতিযোগী ঐতিহাসিক মেলায় কেবল পুরুষরাই উপস্থিত হত না। বহু দূরদূরান্ত হতে মেয়ে কবিরা ও এসে উপস্থিত হত।
মানবতার শিক্ষক সাইয়্যেদূল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র মক্কা ভুমিতে ইসলাম প্রচার শুরু করার পর থেকে ঐতিহাসিক হিযরতের পূর্ব পর্যন্ত যারা সোনালী ইসলামের অমীয় সুধা গ্রহন করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে থেকে কেবল মাত্র একজন মহিলাও সতের জন পুরুষ পড়ালেখা জানতেন বলে কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
সেই ভাগ্যবর্তী মহিলাটি ছিলেন বনী আদা গোত্রের হযরত শাফা বিনতে আব্দুল্লাহ।
এই ভাগ্যবর্তী মহিলাই পরবর্তীতে উম্মুল মু'মীনিন হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত হাফসা (রাঃ) আনহার শিক্ষিকা মনোনীত হন ।
আর ভাগ্যবান পুরুষদের মধ্যে হতে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছিলেন সকলের শীর্ষে।
একথা অতীব সত্য কথা যে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। শিক্ষাই হল মানব আত্মার খাদ্য । অক্ষরহীন অশিক্ষিত মানুষের কোন খানেই মূল্য নেই। কেননা তারা ভাল মন্দের মধ্যে ও তার তম্য করতে পারেনা ।
তাই তো কথ্য ভাষায় বলা হয় অশিক্ষিত মানুষ হল পশুর তুল্য । অশিক্ষিত মানুষের নিকট হতে মানুষ কিছুই আশা করতে পারেনা। কেননা তার নিজের আলো নেই সে অন্যকে পথ দেখাবে কি ভাবে । শৈশবে গৃহে থেকে পিতা মাতার মায়া মমতার স্নেহের ক্রোড়ে বলে যে শিক্ষা লাভ করে লাভ করে থাকে । তাই সেই শিক্ষাই হল তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের শিক্ষার মূল ভিত্তি।
শৈশব কাল গৃহে থেকে মাতা পিতার সৎসর্গে থেকে যে আচার ব্যবহার চালচলন আদাব কায়দা শিক্ষা লাভ করে সেই প্রাথমিক শিক্ষাই পরবর্তীকালে শিক্ষার মাধ্যমে তাদের সুপ্ত কোমলমতী হৃদয়ে স্থান পায়। মনে রাখতে হবে শৈশবের গৃহের পিতা মাতার শিক্ষাই শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের শিক্ষার পথকে সুগম করে দেয়।
যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে নরম মাটি যেমন ইচ্ছা তেমনিই করা যায় তেমনিই কোমলমতী শিশুদেরকে পিতা মাতা গৃহে বরে যে শিক্ষা দেয় সেই শিক্ষাই তাদের হৃদয়ে অঙ্কিত হয়ে যায় ।
নবী দুলালী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) জীবনেও তাই ঘটেছিল বিভিন্ন বর্ণনা হতে জানা যায় তৎকালীন আরব জাহানে নিখিল বিশ্বের ত্রানকর্তা সুপারিশীর কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ই হলেন সরাসরি ওহীর জ্ঞানে জ্ঞানি। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কর্তৃক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সর্ব কালের সর্ব যুগের সর্ব শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ।
তারই হতে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ) সর্ব প্রথম তাওহীদ ভিত্তিক শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শিশু কালে ঐতিহাসিক তায়েফে লালিত পালিত হয়েছেন। যেই তায়েফ তাকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে কষ্ট দিয়েছে ।
সেখানকার লোকদের মুখের ভাষা ছিল খুব সুন্দর ও চমৎকার কথা শুনলে মনে হত আবার যেন কথা বলে । এই বিশ্ব জাহানে শিক্ষা আশার একমাত্র উৎস হলেন স্বয়ং বিশ্ব প্রভূ আল্লাহ তায়ালা ।
আর হযরত জিব্রাঈল (আঃ) হলেন বাহক পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাওহীদের বর্ণনা সম্বলিত আয়াতগুলোর মর্মার্থ পূর্ণ রূপে উপলব্ধি করতেন এবং তিনিই এক মাত্র সর্ব প্রথম তাওহীদ তথা আল্লাহ তায়ালার একত্ব বাদের প্রতি আকৃষ্ট ও মুগ্ধ হন এবং তাওহীদের বিশ্বাসে নিজেকে পূর্ণ ভাবে প্রবেশ করায়ে খোদাভীরু হয়ে উঠেন।
কেবণ যে তিনিই তাওহীদের প্রতি আকৃষ্ট ও মুগ্ধ হতেন তানয় বরং তার পরিবার বর্গকে তাওহীদের প্রতি মৃগ্ধও আকৃষ্টি করার জন্য সময় সুযোগ পেলেই সন্তান সন্তুতি ও স্ত্রী বর্গ আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বন্দবদেরকে গৃহে কিংবা মজলিসে রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার তাওহীদের বাণী সমূহ পাঠ করে শুনাতেন।
আদরের মানিক নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) পিতার সাথে থেকেই সমস্ত তাওহীদের বাণী শ্রবণ করতেন এবং সাথে সাথে নিজ মেধাই তীক্ষ্ণ স্মৰণ শক্তি বলে তা কণ্ঠস্থ করে নিতেন। ইসলামের মূল ভিত্তি তথা ঈমান, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি বিষয়ে হযরত ফাতেমা (রাঃ) পিতার স্নেহ ছায়ায় ও মায়ের নিকট থেকেই মৌলিক বিষয়গুলোতে আদর্শময়ী হয়ে উঠেছিলেন।
বাল্য কালে পিতা মাতার স্নেহ মায়া মমতার বন্ধনে থেকে আল্লাহর ভীতি ও পরহেযগারীর যে আদর্শ শিক্ষা পেয়েছেন তার কারণেই পরবর্তী জীবনে আদর্শ মহিলা হিসেবে ইতিহাস তথা প্রতিটি মানুষের হৃদয় মন্দিরে চির জাগ্রত হয়ে আছে। তবে একথা ও উল্লেখ্য বিষয় যে হযরত ফাতেমা (রাঃ) ধর্মের প্রয়োজনীয় বিষয় গুলো কেবল পিতা মুহাম্মদের (সাঃ) নিকট হতেই শিক্ষা লাভ করেননি বরং সময় সাপেক্ষ বোন ও মায়ের কাছ হতেও শিখেছেন।
তবে তাদের নিকটই সবচেয়ে বেশি শিখেছেন। যেহেতু বোন এবং মা সব চেয়ে বেশি সময় দিতে পেরেছেন। উল্লেখ্য বিষয় হল বোন ও মাতার শিক্ষাই তার সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে। যার কারণে হযরত ফাতেমা (রাঃ) কিশোরী বয়সেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে দীনের সকল বিষয় প্রয়োজনীয় সকল তালীম তারবীয়াতের শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
অনেক সময় সুযোগ হলে প্রিয় নবী (সাঃ) নিজেও ফাতেমা (রাঃ)-কে আদব আখলাক সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন। তাই সার্বিক দিক থেকে চিন্তা করলে দেখা যায় নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ওস্তাদ ছিলেন প্রিয় নবী ।
তিনি তার আদরের দুলালীকে নিজের আমল আখলাক অনুযায়ী আমল আখলাক শিক্ষা দিয়ে বিশ্বের সমস্ত মহিলাদের মধ্যে সর্ব গুণের অধিকারী ও সর্বোত্তম করে গড়ে তুলেছেন। যার কারণেই নবীয়ে দোজাহান হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেমনি ভাবে সর্ব কালের সর্ব যুগের সর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে দুনিয়া আখেরাতের সর্দার ও সুপারিশীর কান্ডারী হয়েছেন।
তদ্রপ নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) ও আমল আখলাক ও আদবে সকলের শীর্ষে অধিষ্ঠিত হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের সর্দার হয়েছেন । প্রিয়া পাঠক পাঠিকাগণ অত্র আলোচনার মধ্যে আলোচিত হয়েছে যে প্রিয় নবী (সাঃ) ই ছিলেন নবী দুলালী হযরত ফাতেমার শিক্ষক কিন্তু তিনি ছাড়া বোন ও মায়ের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করলেও তাদেরকে শিক্ষক বলে অভিহিত করা হয়নি।
কেননা হযরত ফাতেমা (রাঃ) হর হামেশাই তার পিতা বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শিক্ষা ও উপদেশাবলী তার হৃদয়পটে গেঁথে নিয়ে তদনুযায়ী আমল করতেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) শৈশব কাল হতে নবী মুহাম্মদের মৃত্যু পর্যন্ত প্রিয়নবী মুহাম্মদের মৃত্যু কাল পর্যন্ত প্রিয়নবীর প্রতিটি ক্ষেত্রে তথা কথা বার্তা, চাল চলনে এবং উপদেশের মধ্যে দিয়ে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে সর্ব শিক্ষায় শিক্ষাদান করে গেছেন।
বিধায় এ কথা নিশ্চিত সত্য যে পিতা মুহাম্মদুর রাসুলূল্লাহ ও মাতা হযরত খাদিজার (রাঃ) দুর্লভ চরিত্র ও জ্ঞানে গুণের মহিমায় হযরত ফাতেমা (রাঃ) বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী হয়েছিলেন। যা গোটা মানব জাতীর জন্য এক বিস্ময়কর আদর্শ হয়ে ইতিহাস রচনার পথকে সুগম করে দিয়েছে।
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মদীনা শরীফে হিযরত
মক্কার খোদাদ্রোহী কাফির মুশরিকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের সীমা যখন ছড়িয়ে গেল তখন মহান করুনার আধার আল্লাহ জাল্লাহ শানুহুর পক্ষ হতে হিজরত করার নির্দেশ দেয়া হয়। এই মুহূর্তে প্রিয় নবী (সঃ)- আপন পাহারাদার ও আমানতদার হিসাবে নবী প্রেমিক শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ)-কে নিজ চাদর গায়ে দিয়ে শাযিত করে রেখে গিয়েছেন, উক্ত ঘটনা ইতিহাসের পাতায় নবী প্রেমের উজ্জ্বল ঘটনা হিসেবে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
যাই হোক মদীনায়ে তাজেদাররে মুদাসসাম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পালনার্থে হিজরত করে মদীনার কোবা পল্লীতে পৌঁছার পরে শেরে খোদা খলিফা হযরত আলী (রাঃ) মানুষের আমানত মানুষকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়ে মদীনায় হিজরত করে চেল যান।
আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মক্কা ত্যাগ করার সময় আপন পরিবার বর্গ বিবি সাওদা এবং উম্মে কুলসুম ও হযরত ফাতেমা (রাঃ) কন্যাদ্বয় আর ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর পত্নী বিবি উম্মে রোমান।
তার দুই কন্যা আসমা ও আয়েশা (রাঃ) এবং দু'পুত্র আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান আর পিতা আবু কোহাফাকে মক্কা শরীফেই রেখে যান ।
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশে মদীনায় হিজরত করে চলে যাওয়ার পর মুসলমানদের মধ্যে থেকে অনেকেই গোপনে গোপনে হিজরত করে মদীনা শরীফে চলে যান।
পবিত্র মদীনা শরীফে বর্তমান মসজিদে নববী সংলগ্ন প্রিয় নবী (সঃ)-এর হুজরা শরীফ এবং অন্য স্থানে খলিফা আবু বকর (রাঃ)-এর বাসস্থান নির্মিত হওয়ার পর প্রিয় নবী (সঃ) আপন পরিবার বর্গকে আমার জন্য স্বীয় গোলাম আবুরাকে এবং পালিত পুত্র যায়েদ কে মক্কা শরীফে পাঠালেন।
ঐ সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) আপন পরিবার বর্গকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। সুতরাং হযরত আবু রাকে ও যায়েদ (রাঃ) উম্মুল মু'নীন হযরত সাওদা (রাঃ) এবং উম্মে কুলসুম ও হযরত ফাতেমা (রাঃ) কেহ উটের পিঠে হাওদার ভিতরে বসে মদিনার দিকে চললেন।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় সুদীর্ঘ সাড়ে তিনশত মাইল পথ অতিক্রম করে নিরাপদে এই কাফেলা মদিনা শরীফে পৌঁছলেন। বিশ্বনবী শিরমণি হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর বিবি সাওদা বিনতে যামআ এবং আদরের দুলালী দুই কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও উম্মে কুলসুম (রাঃ) নব নির্মিত মসজিদে নববী সংলগ্ন হুজরায় অবতরণ করেলেন ।