হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 14

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 13

নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও আধুনিকা নারী

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ! আমরা ফাতেমার জীবনী গ্রন্থে তার সংসারী জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। এখন আমরা তার পবিত্র জীবনের আলোকে বর্তমান যুগের নারীদের অবস্থা জেনে নেই। আমরা নিজেরাই তার পবিত্র চরিত্রের সাথে আমাদের মা বোনদের চরিত্রের পার্থক্যের রূপ রেখা নির্ণয় করতে পারব। 

কেবল নির্ণয় করে আমাদের সুচিন্তিত বিবেক থেমে থাকবেনা। বরং আমরা চেষ্টা করব খতিয়ে দেখতে কোথায় আমাদের কালির দাগ রয়েছে। কেন আমাদের সমাজের মা বোনেরা পশু বধুরা পথে ঘাটে গৃহে কেন লাঞ্ছিত অপমানিত হচ্ছে। অথচ নবী কন্যা খাতুমে জান্নাত হযরত ফাতেমার (রাঃ) জীবনের বিভিন্ন দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই বিশ্বের রমনীদের আদর্শের প্রতীক হযরত ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন খুবই লজ্জাশীলা। 

সত্য, তার লজ্জাশীলতা ও খোদা ভীতির কথা লিখনির মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবেনা। তার পারও জীবনে এমন এ দেখা গেছে তিনি কোন সময় কচি বালকের সামনেও বের হতেন না অথচ কচি বালকের উপর পর্দা প্রথা শিথিল রয়েছে। এমন কি যদি অন্ধ লোকের শব্দ পেত তাহলেও গৃহে যেয়ে পালাতেন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পার তার পবিত্র লাশ কেহ দেখতে পায় কিনা এ নিয়ে দিবা রাত চিন্তা করতেন। 

কেবল চিন্তাই করতেন না মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে তার ওয়ারিশদের কাছে বিশেষভাবে অছিয়ত করে গেলেন তার মৃত্যুর পরে তার লাশ যেন রাতের আঁধারেই কবরের মধ্যে রাখা হয়। আর তার মৃত্যুর পরে উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা (রাঃ) ছাড়া অন্য কেহ যেন তাকে গোসল না করান। 

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু চিন্তা করে দেখুন নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কতদুর লজ্জাশীলা ছিলেন। অথচ বর্তমান যগের নারী সমাজের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় লজ্জা শব্দের প্রয়োগ তাদের মধ্যে হয়কিনা সন্দেহ লাগে। 

বিশেষ করে শহরে বন্দরে বসবাসকারী মেয়েদের প্রতি তাকালে মনে হয় লজ্জাশীলতা ধারন করা বোকামীর চিহ্ন যার কারনে বর্তমান যুগের শিক্ষিতা নারীরা পথে ঘাটে লজ্জাকে পরিহার করে পথে ঘাটে খোলা মেলা চলাকে আধুনিকতা মনে করেন । অথচ আল্লাহ তায়ালা নারীদের লক্ষ্য করে আল কোরআনে এরশাদ করেন-
ولا يبديس زينهن الا ماظم منها دالنور

“আর তারা (নারীরা) যেন নিজেদের সীনাত (সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে যা স্বতই প্রকাশ হয়ে পড়ে তার কথা স্বতন্ত্র । যাইহোক আমাদের সমাজের প্রতি তাকালে দেখা যায় পাশ্চাত্যের আবহাওয়া প্রভাবান্বিত হয়ে আমাদের সমাজ হতে লজ্জা শরম একেবারে উধাও হতে চলেছে। বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় বর্তমান যুগের নারীরা পাশ্চাত্যের সৌমের মাতা কলে পড়ে যৌগ কাপরে লজ্জ শরম মাথা খেয়ে যৌন সংক্রান্ত খারাপ কাজে অহরহ ধাবিত হচ্ছে। 

একথা বাস্তব সত্য কথা যে মানব জীবনে যৌন উত্তেজনা হল আগুনের ন্যায়। কেননা আগুন যেমনিভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারে তেমনিভাবে আগুন মানুষকে পুড়েও ভষ্ম করতে পারে। মানুষ যখন প্রথম দিকে এই আগুনের ব্যবহার সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখতনা তখন তারা বর্বর অসভ্য বনের প্রাণীর মত কাঁচা মাংস ফলমূল খেয়ে বনেবনে ঘুরে বেড়াতেন। 

তখন তাদের শরীর হতে খারাপ গন্ধ বের হত তাদের মধ্যে মনুষ্যবোধ বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু আগুনের আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে তারা ফিরে পেল তাদের মনুষ্য জ্ঞান আর মানব সভ্যতার গতিধারা তরান্বিত করলো। তাই দেখা যায় এই আগুন মানব কল্যানের অনেক কাজেই ব্যবহার হয়ে থাকে। 

তবে একথা বিশ্বাসযোগ্য যদি আগুনের আবিষ্কার না হত তাহলে মানব সভ্যতার বর্তমান রূপ রেখা অনেক পিছিয়ে থাকত। তবে এই আগুন মানব কল্যানের অনেক কাজে আসলেও আবার মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে ভষ্ম করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। 

তবে এই আগুনের ব্যবহার পারিবারিক ক্ষেত্রে রান্না ঘরের উনুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আর এই আগুনের মাধ্যমেই জীবন বাঁচার অনেক খাদ্য রান্না করা হবে। যে খাদ্য খেয়ে শরীরের পুষ্টি হবে। কিন্তু এহেন উপকারী আগুন যদি পাকের ঘর হতে এনে ঘরের মাচায় রেখে দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে ঐ ঘরের আসবাব পত্র সকল কিছুই পুড়ে ছাই ছাই হয়ে যাবে। 

সত্যি। কথা বলতে হয় বর্তমান যুগেও যৌন বিষয়টাকে যেন উপকারী আগুনকে রান্না ঘরের উনুনের মধ্যে হতে টেনে নিয়ে ঘরের মাচায় দেয়া হয়েছে। মনে রাখবেন যেখানে যে বস্তু শোভা পায় তথায় না রেখে যদি অন্য স্থানে রাখা হয় তাহলেই বিঘ্ন ঘটে। 

তাই আমাদের আধুনিক সমাজের দিকে তাকালেও দেখা যায় তদ্রূপ ঘটেছে। বর্তমান যুগে নারী স্বাধীনতা, নারী শিক্ষা নামে সমস্ত অনাচার বেড়ে চলছে, তাতে সমাজের ব্রিাট ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে হয় কিন্তু ইসলাম সকল সমস্যার সমাধান দিয়ে সুখী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে যৌন সমস্যার যে সুন্দর সমাধান দিয়েছে গোটা বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীর মধ্যে হতে অন্য কোন ধর্ম আজ পর্যন্ত তা দিতে সক্ষম হয়নি। 

আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম ইসলাম ধর্মের বিধান হল খায়েশের দৃষ্টিতে পর স্ত্রী লোকদের প্রতি তাকাল যেমনি গুরুতর পাপ তেমনি নিজের বৈধ স্ত্রীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হল সওয়াবের কাজ। তবে জীবন চলার প্রতিটি পদেই একথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে লজ্জা হল ঈমানের অংশ। তাই যদি কারও মধ্যে লজ্জাশীলতার অভাব দেখা যায় তাহলে মনে রাখতে হবে তার ঈমানের কিছু অংশও বিলুপ্তি হয়েছে। 

আর সবচেয়ে বড় কথা হল এ সময় পৃথিবীতে সাজসজ্জা, গয়না যেমনি নারীকে বিমোহিত করে তোলে তার চেয়ে বেশি বিমোহিত করে তার লজ্জা। তাইতো প্রবাদে বলা হয়ে থাকে লজ্জা হল ঈমানের অংশ। 

একজন আদর্শ নারীর ব্যক্তিত্ব, নারীত্ব ও মাধুর্য একমাত্র লজ্জাশীলতার জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ) ওর গোটা জীবনের প্রতিটি কাজের মধ্যে দিয়ে এই মহৎ গুনাগুনের বিকাশ ঘটে ছিল। আর এই মহৎগুনের জন্যই তিনি প্রিরূ নবী (সঃ)-এর আদরের দুলালী বলে অভিহিত হয়েছেন। 

কিছু অতীব দুঃখের বিষয় হল বর্তমান যুগের মা বোনদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে মনে হয় পাশ্চাত্য সভ্যতার নামে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রানে যে ঢেউ উঠেছে সেই চেটে তাদেরকে গিলে ফেলেছে। সত্য কথা অপ্রিয় হলেও বলতে হয় আমাদের আধুনিক সমাজের শিক্ষিত নারীরা আল্লাহর পথ ও মতকে ভুলে গিয়ে ইউরোপের অনুকরনে নগ্নতা আর অর্ধ নগ্নতাকে সামাজিক সভ্যতা বলে মনে করেছে।

তারা আধুনিক যুগের ফ্যাশন মনে করে রাস্তা ঘাটে পাতলা সিল্কের শাড়ী পড়ে সুঠাম সুন্দর দেহের সৌষ্ঠবকে প্রকাশ করে পুরুষদের চক্ষু কেড়ে নেয়ার মধ্যে তৃপ্তি পায় ৷ তারা তাদের দেহের সুন্দর্য ও শরীরের আকৃতিকে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে চলেছে। সত্যি কথা বলতে কি তাদের এহেন আচারনে কোন লজ্জাই হচ্ছে না। লজ্জাতো বাদ দিলাম মুসলিম নারী হিসেবে একটু সংকোচ বোধ পর্যন্ত হচ্ছে না ।

আসলে ও সমস্ত আধুনিকা নারীরা কি একবারও কি চিন্তা করেছে তাদের দুনিয়া হতে বিদায় নিয়ে যেতে হবে। এবং দুনিয়ার এহেন রং তামাশার জন্য পরকালে জবাবদিহি হতে হবে। হে আধুনিকা নারী! তুমি যতই আধুনিকা ও সুন্দর্যের পুজারী হওনা কেন তোমাকে দুনিয়া হতে বিদায় নিতে হবে। কেননা প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুর অমীয় সুধা পান করতে হবে। 

তুমি বহু সম্পদের মালিক হয়ে থাকলেও তোমাকে সাড়ে তিন হাত জায়গা থাকতে হবে। হে প্রিয় পাঠ পাঠিকাগণ নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) আপনার আধুনিক যুগের মত কোন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেনি তবে তার মত বিদুষী নারী ইতিহাসের পাতা খোজ করলে কজন পাওয়া যাবে। তবে শিক্ষা গ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। 

তবে কথা হল শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৃত শিক্ষাকে আয়ত্ করতে চেষ্টা করে আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাসিল করার পথ সুগম করে নেন। মনে রাখবেন নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) প্রকৃতি শিক্ষা গ্রহণ করেই পৃথিবীর ইতিহাসে তথা প্রতিটি মুসলিম নরনারীর হৃদয়ে চির ভাস্কর হয়ে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আধুনিক সমাজের নারীদেরকে নবী কন্যা হযরত ফাতেমার আদর্শে জীবন গঠন করার শক্তি দেবে। 

সত্য ভাষণ

সততা মানুষকে সুন্দর জীবন যাপনের পথ বের করে দেয়, তাই একা নিশ্চিত সত্য যে সত্যই সুন্দর সততা মানুষকে পুত পবিত্র জীবন যাপনের পথকে সুগম করে দেয়। আর এই সত্যকে পার্থিব জগতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই নবী রাসুলগণ প্রেরিত হয়েছেন। এই সত্যের ধারক বাহক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
গোটা জীবনই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে বিলীন করে দিয়েছেন। 

সত্যের দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমাতুজ জহুরা (রাঃ)-এর গোটা জীবনই নিখুত সত্যের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। সাংসারিক জীবনের অভাব অনাটনের মধ্যেও তিনি সত্যপথ হতে এক মুহূর্তের জন্যও সরে পড়েনি। বরং অটল ছিলেন। তিনি জন্মের পর যখন থেকে তার জ্ঞান লাভ সত্যের উপর দৃঢ় হয়েছে তখন হতেই মৃত্যু পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই কার সাথে মিথ্যা কথা বলেনি। 

শুনলে অবাক লাগে হযরত আলী (রাঃ)-এর গৃহে যেয়েও কারণ অকারণে কোন সময়ই আলী (রাঃ)-এর সাথে মিথ্যা কথা বলেনি। সাধারনত দেখা যায় মানব সন্তান স্বামীর গৃহে বসে স্বামীর সাথে ছলেবলে অনেক সময়ই স্বার্থ স্বীদ্ধির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়। কিন্তও হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ছিল তিনি কোন সময়ই হযরত আলী (রাঃ)-এর সামথে মিথ্যা বলেন নি, সাংসারিক জীবনের ও কোন সময়ই মিথ্যা কথা বলেনি। 

বরং সাংসারিক জীবনের সুখ দুঃখের মুহূর্তে ও তার মুখ হতে মিথ্যা কথা বের হয়ে আসেনি। সত্য ভাষনকে তিনি তার জীবনের প্রধান হিসেবে গ্রহণ করে নিয়ে ছিলেন।