হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 2

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী 

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কাল

একথা সর্বজন বিদিত যে নিখিল বিশ্বের ত্রানকর্তা সুপারিশীর কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন দয়ার আধার। যেমন ছিলেন তিনি কষ্ট সহিষ্ণ, তেমনি ভাবে সততা বিশ্বস্ততা, আমানতদারী এক কর্মঠ প্রভৃতির জন্য বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন গম্ভীর ও ভাবুক প্রকৃতির। নবী মুহাম্মাদের (সাঃ) মন ছিল সরল উদার, আর স্বভাব ছিল নম্র, হঠাৎ কোন ব্যাপারেই রেগে যেতেন না বরং ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতেন।

যার কারণেই তো তিনি রাহমাতুললিল আলামীন উপাধিতে ভূষিত হয়ে দুনিয়ায় আগমন করেছেন। নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ) বাল্যা কাল হতেই আদর্শ পিতার ছাচেই গড়ে উঠেছিলেন। হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ)-এর গোটা জীবনের দিকে চোখ বুলালে দেখা যায় প্রিয় নবী (সাঃ)-এর চরিত্রের প্রতিটি গুনই তার জীবনে প্রতিফলিত হয়েছিল।

বাল্যকাল হতেই তিনি সত্যের পূজারী ও আমানত দারী, লাজুক নম্র ও সরল মনা ছিলেন। আশ্চার্যের বিষয় হল নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যে বিষয়ের প্রতি । বিশেষ ভাবে সজাগ থাকতেন তিনি ও সেই সকল বিষয়ের প্রতি সর্বদা সজাগ থাকতেন । যেমন সততা, আমানতদারী লাজুকতা । তিনি বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েদের মত বেহুদা সময় নষ্ট করে বাজে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ধুলাবালি নিয়ে রং তামাশা করতে আদৌ পছন্দ করতেন না।

তবে এই নয় যে পড়াপড়শী ছেলে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেনা বরং তিনি তার সমবয়সী সহপাঠীদের সাথে সর্বদা সদ্ভাব বজায় রাখতেন। এমন কি যারা প্রিয় নবী (সাঃ)-এর প্রধান শত্রু ছিল অর্থাৎ তাকে চিরতরে দুনিয়া হতে বিদায় করা জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হত তাদের সঙ্গেও এক মুহূর্তের জন্যও খারাপ ব্যবহার করতেন না। সেই শত্রুরাও নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর চরিত্রের ভূয়াষী প্রশংসা করতেন ।

তবে একথা সর্বজন বিদিত যে কেহ যদি উত্তম চরিত্র ও ভাল গুনের অধিকারী হয় তাহালে প্রধান শুক্র তাকে খারাপ জানলে ও তার আদর্শ বাদ ও চরিত্র সম্পর্কে সর্বদা প্রশংসা করে যা ঘটেছিল হযরতের কলিজার টুকরা নয়নের মনি হযরত ফাতেমার (রাঃ)-এর বেলা ।

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বাল্যকালের আনন্দ মুহূর্তের দিনগুলির প্রতি তাকালে ও দেখা যায় তিনি কোন সময়ই পাড়া প্রতিবেশীর ছেলে মেয়েদের সাথে ঝগড়া বিবাদ কররেননি বরং এমন ও দেখা গেছে ঐ বাল্য বয়সে পাড়া প্রতিবেশী ছেলেমেয়েদের ঝগড়া বিবাদের মিমাংশা মিটায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, এটা ছিল তার বাল্য কালের চরিত্র।

তিনি কোন সময়ই পাড়াপ্রতিবেশি ছেলেমেয়েদের দোষত্রুটি ও কোন অভিযোগ পিতা মাতার কাছে দিতেন না । আবার পাড়া প্রতিবেশী ছেলে মেয়েরাও তাদের পিতা মাতার কাছে ফাতেমা (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তুলতেন না। বরং পিতা মাতার কাছে ফাতিমার (রাঃ) বিভিন্ন গুণাবলী আলোচনা করতেন ।
প্রিয় পাঠক, পাঠিকাগণ এ থেকেই অনুধাবন করা যেতে পারে যে, শৈশব ও 'বাল্যকালে তিনি কেমন শান্তি প্রকৃতির লোক ছিলেন।

আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সাংসারিক জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় তার সংসারে অভাব অনটন সর্বদা লেগেই থাকত। কিন্তু আল্লাহর নবী কোন সময়ই অত্যাধিক অভাব অভিযোগের মধ্যে থেকে ও নাখোশ হন নি। 

বরং সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন যাই হোক এহেন অভাব অনটনের সংসারে লালিত পালিত হয়ে ও ফাতিমা (রাঃ) কোন সময়ই পাড়া প্রতিবেশি ছেলে মেয়েদের মত এটা নেই ওটা দাও এরকম আবদার করতেননা। সত্যি।

ফাতিমা (রাঃ)-কে দেখে মনে হত পার্থিব কোন ভোগ বিলাসের প্রতিই তার কোন মনোযোগ নেই সত্যি। ফাতেমা (রাঃ) যে জগত বরেণ্যা আদর্শময়ী হয়ে ইতিহাস তথা প্রতিটি মানুষের হৃদয় মন্দিরে চির জাগ্রত হয়ে থাকবে তা তার বাল্য কালের আচরণ থেকেই প্রমাণিত হয়েছিল। তিনি তার বাল্যকালেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন এ সময় সুযোগ হলেই পিতার নিকট অবস্থান করে তার উপদেশ বাণী শ্রবণ করাতে কেবল পিতার উপদেশ গুলি শ্রবণ করতেন তা নয় বরং তা বাস্তব জীবনে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করতেন।

অনেক ক্ষেত্রে এমন ও দেখা গেেেছ অন্যকে যে উপদেশ দিতেন তা শ্রবণ করে ঐসব আদেশ উপদেশনিজের জীবনে প্রতিফলিত করতেন। পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে হযরত ফাতিমা (রাঃ) দয়ার প্রতীক ছিলেন, যার কাররণেই বাল্যকালে কার দুঃখ কষ্টের কথা শুনলে নিজে অস্থির হয়ে যেতেন। 

নবী মুহাম্মাদের (সঃ) কোন বিপদ ও দুঃখ কষ্টের কথা শুনলে নিতান্ত অস্থির হয়ে পড়তেন, শুধু অস্থির নয় তা সমাধানের জন্য ও মাতা সাহেবানীর সাথে আলাপ আলোচনা করতেন এবং বিপদ আপদ থেকে মুক্তি ও মঙ্গলের জন্য রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার দরবারে কান্না ভেজা কণ্ঠে দুহাত তুলে মুনাজাত করতেন। 

শৈশব হতেই ফাতিমা(রাঃ) ছিলেন নির্ভীক, তেজস্বিনা, ও বক্তা

তিনি উচিত কথা বলতে শত্রু মিত্র কাউকে পরওয়া করতেন না, বরং বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সর্বদা উচিত ও সত্য কথা বলতেন । ভাগ্যবতী নারী হযরত খাদিজা (রাঃ) সর্বদা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে চোখে চোখে রাখাতেন। 

কেননা তাঁর ও একান্ত ইচ্ছা ছিল মেয়েকে আদর্শ নারী হিসেবে গড়ে তোলা, তিনি ফাতেমা (রাঃ)-কে বাল্যকালে ধর্মের কথা শুনাতেন এবং বাস্তব জীবনে হাতে নাতে শিক্ষা দিতেন প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ মনে রাখাবেন একজন আদর্শ মা ই আদর্শ শিশু গড়ে তুলতে পারে। যার জলন্ত প্রমাণ হল হযরত খাদিজা ও ফাতেমা অর্থাৎ যেমন মা তেমন মেয়ে ।

হযরত ফাতেমা (রাঃ) মায়ের আদেশ ও উপদেশাবলী মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতেন এবং বাস্তব জীবনে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চেষ্টা করতেন। তবে ধর্মের কথা শুনতে যেয়ে আদরের সাথে মাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করতেন । তবে কোন প্রশ্নই অহেতুক ছিলনা। 

এক দিন তিনি তার মাতা সাহেবানীকে প্রশ্ন করলেন আম্মা আমাকে বলুন তো রহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালা তো সর্বশক্তিমান ও নিরাকার আখেরাতে কি তার সাক্ষাৎ পার?
মেয়ের কথা শুনে মা খাদিজা মুচকি হাস দিয়ে বললেন বিশ্ব প্রভু আল্লাহ তায়ালা যেমনি ভাবে আমাদের চলতে হুকুম করেছেন তেমনিভাবে যদি আমরা চলি তাহলে আমরা অবশ্যই পরলোকে তার দর্শন পাব। 

প্রকৃত পক্ষে পিতা মাতার শিক্ষাই হল চরম শিক্ষা ছোট বেলা ছেলে মেয়েকে পিতা মাতার নিকট হতে যে শিক্ষা পান তাই কোমল প্রাণে চিরদিনের জন্য অঙ্কিত হয়ে যায়, এবং সেইশিক্ষাই ভবিষ্যত জীবনের চলার পাথেয় হয়।

বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েদের মত তবুও হযরত ফাতিমা (রাঃ) স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না ছেলে মেয়েরা তার অমূল্য শিক্ষার কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হযরত ফাতিমা (রাঃ) এ আদর্শ শিক্ষা এ জীবন চলার পথ নির্দেশীকা একমাত্র আদর্শ পিতা মাতার নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন তাই আদার্শ পিতা মাতাই আদর্শ ছেলে মেয়ে গঠন করতে পারে। 

বাল্যকাল হতেই হযরত ফাতিমা (রাঃ) দুনিয়ার ভোগ বিলাস আরাম আয়েশের প্রতি লোভ করতেন না যার কারণেই প্রিয় নবী (সঃ) তাকে আদর করে বতুল বা সংসার বিরাগানি বলে ডাকতেন ।

বাল্যকাল হতেই হযরত ফাতিমা (রাঃ) পিতা মাতাকে অগাধ ভক্তি করতেন, শুধু ভক্তি নয় পিতা মাতার আদেশ নিষেধ উপদেশ তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ রূপে গ্রহণ করেছিলেন। প্রিয় নবী (সঃ)-এর প্রতিটি গুণের সমাহার ঘটেছিল হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর চরিত্রের মানসপটে। 

তাই তো হযরত আয়েশা (রাঃ) তার এক বর্ণনায় বলেছেন। নবী দুলালী হযরত ফাতিমাতুজ জোহরা (রাঃ)-কে দেখলে মনে হত আমি নবী মোহাম্মাদ (সঃ)-কে দেখেছি । কেননা তার উত্তম চরিত্রের সকল মহৎগুণাবলীই আমি ফাতিমা (রাঃ)-এর জীবনে দেখতে পাই ।

শৈশবে ফাতিমা (রাঃ) পিতা মাতাকে কতদূর ভালবাসতেন ও ভাল জানতেন তা নিম্নের ঘটনাটির মাধ্যমেই অনুধাবন করা যেতে পারে । কোন এক সময় প্রিয় নবী (সঃ) কোন এক স্থান হতে বাড়ী যাচ্ছিলেনএমনি সময় হঠাৎ এক খোদাদ্রোহী কোরাইশ তার পাশ রোধ করে দাড়াল শুধু পথ রোধ করে দাড়াল তাই নয় বরং তারা নবী (সঃ)-কে নানাভাবে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতে লাগল ৷ 

তাদের মধ্যে হতে এক কুরাইশআক্রোশ করে প্রিয় নবী (সঃ)-এর মাথায় কতগুলি ধুলো নিক্ষেপ করলো। কিন্তু মানবতার মহান শিক্ষক দয়ার আধার কোন কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইলেন।

ইতিমধ্যে আদরের দুলাল হযরত ফাতেমা (রঃ) তথায় উপস্থিত হয়ে এহেন অমানবিক দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারলেন না। বরং তড়িৎ গতিতে পিতার নিকট এসে মাথার ধূলাবালি ঝারতে ঝারতে নরাধম খোদাদ্রোহী কোরাইশদের লক্ষ্য করে বললেন তোমরা কি মানুষ না অমানুষ তোমাদের মধ্যে মানবতার লেশ ও নেই। 

আমার পিতা তোমাদের কি ক্ষতি করেছে যে তার সাথে তোমরা এহেন অমানবিক অত্যাচার করতেছে? যোগ্য পিতার আদর্শবান মেয়ে হযরত ফাতেমার (রাঃ) তিরস্কারে খোদাদ্রোহী কুরাইশগণ কোন কিছু না বলে লজ্জিত হয়ে ওখান হতে চলে
গেলেন । এমনিভাবে বহু ঘটনা রয়েছে তার জীবনে পিতা মাতার বিপদ আপদ দুঃখ কষ্ট দেখলে মাতার বিপদ আপদ দেখলে ফাতেমা (রাঃ) নিজেকে সুত্রি রাখতে পারত না। 

বরং তালাঘব করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতেন। বাল্য কালেই হযরত ফাতেমার (রাঃ) মাতার স্নেহ হতে বঞ্চিত হয়েছিলেন। প্রিয় নবী (সঃ) সুখ দুঃখের জীবন সঙ্গিনী হযরত খাদিজা (রাঃ)-কে হারিয়ে অন্তরে পেলেন কঠিন আঘাত। যেই আঘাত সহ্য করার মতনা। 

কেননা হযরত খাদিজা (রাঃ) কেবল তার স্ত্রীই ছিলেন তা নয় বরং তিনি ছিলেন তার বিভিন্ন বিপদ আপদের সমসঙ্গী, যার কারণেই হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর বিদায়ের পর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না সত্যি মনে হত যেন নবী মুহাম্মদের অন্তর ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে। 

এদিকে আদরের দুলালী মাতৃহারা হযরত ফাতিমা (রাঃ) শোকে দুঃখে একেবারে ভেঙ্গে পড়লেন। কেননা হযরত খাদিজা (রাঃ) এ মেয়েকে অন্তরের অন্তঃস্থল দিয়ে ভাল বাসতেন আর ফাতিমা (রাঃ) ও মাকে জীবন দিয়ে ভাল বাসতেন। যার কারণেই মাতার বিদায়ের কথা অন্তর হতে মুছতেই পারে না। এককবার ফাতিমা মায়ের কথা মনে করতে করতে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন আব্বাজান আমার যখনই আম্মাজানের কথা মনে পড়ে তখন আমার কিছুই ভাল লাগে না। 

আপনি হযরত জিব্রাইলের (আঃ) নিকট জিজ্ঞেস করে দেখেন আমার মাতা সাহেবানী কেমন আছেন। মাতৃহারা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর এহেন কথা শুনে নবী মুহাম্মাদ (সঃ) অন্তরে খুবই ব্যথা পেলেন। আদরের দুলালীকে আবেগ জড়ান কণ্ঠে স্নেহের সুরে শান্তনা দিয়ে বললেন হে ফাতেমা। তোমার আম্মার মত মা পৃথিবীতে কজন আছে তাকি তুমি একবার ও ভেবে দেখেছ? 

আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালা বেহেস্তের মধ্যে তোমার মাকে শান্তিতে রেখেছেন।
তুমি তার জন্য কোন সময়ই চিন্তা করবেনা। বরং সর্বদা তার মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। 

অন্য আর এক দিনের ঘটনা প্রিয় নবী (সঃ) কাবা গৃহের মধ্যে নামাজ পড়তেছিলেন এমনি সময় একদল খোদাদ্রোহী কুরাইশ অদূরে দণ্ডায়মান হয়ে হযরতকে নানা অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ ও উপহাস করছে। প্রিয় নবী (সঃ) নামাজ রত অবস্থায় সিজদায় গেলেন এমনি সময় নরপিচাশ খোদাদ্রোহী কুরাইশরা একটা উটের নাড়ীভূড়ি এনে চাপিয়ে দিল নবী মুহাম্মদের (সঃ) মাথার উপর। 

মুহূর্তের মধ্যে তার পরিধেয় জামা কাপড় নষ্ট হয়ে গেল, শুধু জামা কাপড় নষ্ট হয়ে হল তা নয় নাড়ি ভূড়ির চাপে কোন ভাবে প্রিয় নবী (সঃ) মাথা তুলতে পারছিলেন না, নবী মুহাম্মদের (সঃ) এহেন দৃশ্য দেখে নরপিচাশ কোরাইশ অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পরলেন।

এহেন সময় নবী দুলালী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা তথায় উপস্থিত হয়ে পিতার এরূপ অবস্থা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না বরং কেঁদে দিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ চোখের পানি মুছতে মুছতে প্রিয় নবী (সঃ)-এর মাথার উপর হতে নারীভুরিগুলো ফেলে দিলেন। 

নারীভুরি ফেলে দিয়ে মনের চাপা ক্ষোভ দূর করতে পারলেন না বরং পিতার পার্শ্বে দাণ্ডায়মান হয়েই কঠোর ভাষায় তাদেরকে তিরস্কার করতে লাগলেন। হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর তিরস্কারমূলক কথা শুনে খোদাদ্রোহী কাফেরগণ লজ্জিত হয়ে সেখান হতে চলে গেলেন।ঐতিহাসিক ওহুদের যুদ্ধে সময়ের এক ঘটনা খোদাদ্রোহী কুরাইশগণ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন সহস্রাধিক সৈন্য নিয়ে নবী মুহাম্মাদের (সঃ)-এর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লেন। নবী মুহাম্মদ (সঃ) তাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য কেবল মাত্র সাত শত সৈন্য নিয়ে তাদের সম্মুখীন হন। 

নবী মুহাম্মাদের (সঃ) সৈন্য কাফেলা সুনিশ্চিত জয়ের মুখে আনন্দে মেতে উঠে এমন কি মনের খুশীতে পশ্চাতে সুরক্ষিত গিরিপথ ছেড়ে গণিমতের মাল সংগ্রহ করার জন্য সৈন্য কাফেলা প্রত্যেকেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। 

নবী মুহাম্মাদের (সঃ) সৈন্য দলের আনন্দ ও গণিমতের মাল সংগ্রহের সময়ের সুবর্ণ সুযোগে খালেদ ইন ওয়ালিদের নেতৃত্বে আবু সুফিয়ানের একদল সৈন্য পিছনে অরক্ষিত গিরি পথ দিয়ে নবী মুহাম্মাদের (সঃ) সৈন্য কাফেলার উপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ চালায়। 

এ আক্রমনের কারণেই সুনিশ্চিত জয়ের মুখে মুসলিম দলের পরাজয় ঘটে কাফিরগণ পাথর মেরে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে ভু-পাতিত করে এমনকি পাথরের আঘাতে তার পবিত্র দাঁত ভেঙ্গে যায়। নবী কুলের শিরুমণি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর এই ঐতিহাসিক পরাজয় এ আহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে বিবি ফাতেমা অস্থির হয়ে পড়লেন; শুধু অস্থিরই হলেন না বরং ঐ মুহুর্তে তার শিশুপুত্র হাসান কে রেখে কতিপয় মুসলিম রমনীসহ উহুদ ময়দানে উপস্থিত হন। 

বিবি ফাতেমা (রাঃ) উহুদ ময়দানে উপস্থিত হয়েই দেখতে পেলেন তার আব্বা জানের পবিত্র দত্ত ও ললাট মুবারক হতে অঝরে রক্ত ঝরছে। অজ্ঞান হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে আছেন। এহেন হৃদয় গ্রাহী দৃশ্য দেখেই হযরত ফাতিমা (রাঃ) প্রিয় নবীর (সঃ) পবিত্র মুস্তক কোলের উপর তুলে নিলেন। আর তার দুচোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ে বক্ষস্থল প্লাবিত হয়ে গেল । 

ইসলামের বীর সৈনিক শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) ঢালে করে পানি এনে দিলেন সেই পানি দ্বারাই ফাতিমা তার আব্বাজানের ক্ষতস্থান ধৌত করে শুষ্ক ঘাস পুড়ে ক্ষত জায়গার মধ্যে প্রলেপ লাগিয়ে দিলেন। 

উল্লেখ্য বিষয় হল এমনি অনেক ঘাটনার মধ্যেই হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর অগাধ পিতৃভক্তির পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। যে পিতৃভক্তির কথা আজও ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরমীয় হয়ে আছে।
বাল্যকাল হতেই হযরত ফাতেমা (রাঃ) আরাম আয়েশ ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন মোটেই পছন্দ করতেন না। কোন ক্ষেত্রে ই তার মধ্যে অহংকারের প্রতিচ্ছবি দেখা যেত না। 

তবে দেখার কথা ও না যেহেতু তিনি পার্থিব জগতের সুখ শান্তি ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে সর্বদা ব্যস্ত হযরত ফাতেমা (রাঃ) থাকতেন তবে পরকালের পাথেয় সংহে ব্যস্ত বলে সাংসারিক কাজকর্মে কোন সময়ই উদাসীন ছিলেন না। 

কোন এক সময়ের ঘটনা তখন হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বয়স মাত্র সাত বছর। বাড়ীর সকলেই এক বিবাহ অনুষ্ঠানে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন তার বড় বোনেরা ভাল ভাল জামা কাপড় পরিধান করে প্রস্তুতি নিলেন, আর হযরত ফাতেমা (রাঃ) পড়ছিলেন মাত্র একখানা ছেড়া কাপড় । তিনি সেই ছেড়া কাপড়া খানা পরেই বোনদের সাথে বিবাহ অনুষ্ঠানে রওয়ানা হলেন ।

তার ছেড়া কাপড় দেখে বোনেরা ভাল কাপড় নিতে বললে তিনি জবাব দিলেন । হে বোনগণ । ভাল ও নতুন কাপড়ের কি প্রয়োজন । আমাদের আব্বাজান তো সর্বক্ষেত্রেই অনাড়ম্বর জীবন যাপন পছন্দ করেন। বিবি ফাতিমা (রাঃ) বাল্যকালে পাড়া প্রতিবেশী বাজে ছেলেমেয়েদের সাথে রং তামাশা ও চলাফেরা করা তো মোটেই পছন্দ করতেন না। 

তবে এটা নয় যে তার সমবয়সীদের সাথে মিলতনা বরং তিনি উত্তম চরিত্রের ছেলে মেয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করত ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায় পরবর্তীকালে যে সমস্ত নারীরা সমাজের প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে তাদের উত্তম চরিত্র ও গুণের দ্বারা জয় করেছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বাল্যকালের খেলার সাথী ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর দুই কন্যা হযরত আসমা এবং হযরত আয়েশা সিদ্দিকা, হযরত উমর (রাঃ)-এর কন্যা হাফসা এবং হযরত জোবায়রের কন্যা ফাতেমা ওরা সকলেই ছিলেন নবী দুলালী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ)-এর বাল্যকালের খেলার সাথী। 

হযরত ফাতেমা শৈশবকাল হতেই বাহিরে ঘুরাফিরা মোটেই পছন্দ করতেন না। তনি গৃহে মাতার সাহচার্য অধিক পছন্দ করতেন। কেননা মায়ের চালচলন কথা বার্তা আদেশ উপদেশ অনুকরণ করে তার মত জীবন গঠন করার ইচ্ছে শৈশব কাল হতেই তার মধ্যে জাগ্রত ছিল। ও প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেই পরবর্তী কালে জ্ঞানে-গুণে আদর্শে ওা চরিত্রে সকল নারীদের শীর্ষে তার নাম স্থান পেয়েছে।