হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 22 - শেষ পর্ব

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 22 - শেষ পর্ব

প্রিয়নবী (সাঃ)-এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা (রাঃ)

নবীয়ে দোজাহান বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার আদরের দুলালী কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও তার স্বামী ইসলামের বীর সৈনিক হযরত আলী (রাঃ)-কে ও তাদের সন্তান কলিজার টুকরা ইমাম হাসান ও হোসাইন (রাঃ)-কে অত্যাধিক ভালজানতেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও হযরত আলীকে (রাঃ) তো ভালবাসতেনই তার চেয়েও তাদের কলিজার টুকরা সন্তানদেরকে বেশী ভালবাসতেন। 

তাদেরকে কলিজার টুকরা বলেই মনে করতেন। তাদেরকে খুশী করার জন্য তাদের সাথে অনেক রং তামাশা করেছেন এমনকি অনেক সময় ইমাম হাসান ও হোসাইন (রাঃ)-কে পিঠে নিয়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলতেন। কোন এক বর্ণনায় উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন কোন এক সকালে প্রিয় নবী (সাঃ) পশমী একটি কাল চাদর পড়ে ছিলেন। 

এমন মুহুর্তে হঠাৎ করে ইমাম হাসান, হোসাইন, নবী কন্যা ফাতেমা (রাঃ) নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) তার নিকটে উপস্থিত হলেন। তাদের দেখেই আল্লাহর নবী (সাঃ) মনের খুশীতে তাদের সবাইকে চাদরের ভিতর টেনে নিলেন, তারপরেরই তার পবিত্র মুখ হতে বের হয়ে আসল রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালা তোমাদের হতে অপবিত্র তা দুরীভূত করুন এবং তোমাদেরকে সৎ ও পবিত্র পথে চলার ক্ষমতা প্রদান করুন। 

অন্য এক বর্ণনায় দেখা যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমরা কোন এক মুহূর্তে আল্লাহর নবীর নিকট রাসূল পত্নী সকলেই বসা ছিলাম। এমনি সময় দেখতে পেলাম হঠাৎ করে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-এর মত হেটে হেটে হাজির হলেন। আল্লাহর নবী (সাঃ) তার আদরের দুলালী কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে দেখা মাত্রই মনের খুশীতে মারহাবা বলে তার ডান অথবা বাম পাশ্বে বসালেন। 

শুধু বসালেনইনা তার কানে কানে কি যেন বললেন । তার পরই নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কেঁদে দিলেন ৷ আল্লাহ নবী (সাঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কান্না ও অস্থিরতা দেখে পূনরায় ডেকে কানে কানে কিযেন বললেন, প্রভাবে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) মনের খুশীতে হাসতে লাগলেন । 

এই মুহূর্তে আমি নবী কন্যা হযরত ফাতেমাকে জিজ্ঞাসা করলাম সকল স্ত্রী লোকদের মধ্যে হতে আল্লাহর নবী তোমাকে ডেকে কি যেন বললেন আর তুমি কেঁদে উঠলে এর মূল কারণ আমাকে বল? আল্লাহর নবী যখন এখান হতে চলে গেলেন তখন নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) বললেন আমি কোন ক্রমেই প্রিয় নবী (সাঃ)-এর গোপন কথা ফাঁস করব না। 

সােিয়্যদুল কাওনাইন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ইহধাম ত্যাগের পরে আমি নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার কাছে অধিকার নিয়ে জিজ্ঞাসা করছি আশা করি অধিকারের যথার্থ মর্যাদা তুমি দিবে। আল্লাহর নবী তোমার কানে কানে গোপনে যা বলেছিলেন তা আমাকে অবশ্যই জানাবে। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর জবাবে বললেন হ্যাঁ এখন বলা যেতে পারে। 

নবী কন্যা ফাতেমা বলেন প্রিয় নবী (সাঃ) প্রথম বারে আমার কানে কানে বলেছিলেন হযরত জিব্রাঈল ফেরেশতা প্রতি বছর নাজিল কৃত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের অংশটুকু একবার পাঠ করেন। কিন্তু এবারে দুইবার পাঠ করেছেন । তাই আমার মনে হচ্ছে যে আমার মৃত্যুর সময় খুবই নিকটে বিধায় হে মা ফাতেমা তুমি সর্ব ক্ষেত্রেই বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে এবং ধৈর্য ধারণ করবে। 

মনে রাখবে তোমার জন্য আমিই হলাম উত্তম আদর্শ বিধায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাকেই তুমি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে। প্রথম বারে আল্লাহর নবী প্রবিত্র মুখে এহেন কথা শ্রবণ করেই আমি কেঁদে দেই। আমার অস্থিরতা এবং ক্রন্দন দেখে প্রিয় নবী (সাঃ) আমাকে পূর্বের ন্যায় কানে কানে বললেন হে মা ফাতেমা, তুমিই এক মাত্র আহলে বাইতের মধ্যে হতে সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। 
এবং বেহেশতী রমণীদের মধ্যে তুমিই সর্দার হবে। 

নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-এর দৃষ্টিতে

প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত ফাতেমা (রাঃ)
ইসলামের বীর সৈনিক নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন। কোন এক সময় নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইহধাম ত্যাগের পর নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনার সঙ্গে হযরত ফাতেমা (রাঃ) কিরূপ ব্যবহার করেছেন? 

জবাবে শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) কান্না ভেজা কণ্ঠে বললেন নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা ছিলেন চির শান্তিময় বেহেশতের একটি সুগন্ধি ফুল। যেমন ভাবে ফুল ঝরে গেলে ও তার মন মাতানো সুভাষ মনকে বিমোহিত করে। তদ্রূপ হযরত ফাতেমা (রাঃ) দুনিয়া মধু মাখা ব্যবহার, গুণ গরিমা আমার ব্যথীত হৃদয়কে শীতল ও আনন্দে ভরে রেছে। 

নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইহধাম ত্যাগের পর দাফনের সময় নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) বলেছিলেন হে নবীয়ে দোজাহান। আপনার কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমার (রাঃ) ইহ ধামত্যাগে আমার ধৈর্য শক্তিকে ক্ষীনবল করে দিয়েছে মনে হচ্ছে যেন আদর শরীরে শক্তি বলতে কিছুই নেই। আমার বাহুবল আর সৌর্য বীর্য আস্তে আস্তে বিলোপ হয়ে যাচ্ছে। 

েবল মাত্র একটি কথাকে হৃদয়ের মাঝে স্মৃতি স্বরূপ ধরে রেখে ধৈর্য্যের প্রহর গুনছি, আর সেই স্মৃতিটুকু হল আপনার চলে যাবার বিরহ, সেদিন আপনাকে আমি নিজ হাতেই কবরের মধ্যে, রেখেছিলাম । একথা সর্বজন সত্য কথা যে, নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন আমাদের প্রতি মহান করুনার আঁধার। আল্লাহ জাল্লাহ শানুহুর বিশেষ দান স্বরূপ । 

আবার সেই প্রভুই হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে উঠিয়ে নিলেন। যাই হোক হযরত আলী (রাঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইহধাম ত্যাগে কষ্ট পেয়েও খুশী হতেন যে তার প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত ফাতেমা (রাঃ)ই বেহেশতের রমণীদের সর্দার হবেন । কোন কোন নির্ভর যোগ্য বর্ণনা হতে জানা যায় যে, নবী কন্যা হযরত ফাতেমার (রাঃ) নামাযে জানাযা শেরে খোদ হযরত আলী (রাঃ) পড়িয়ে ছিলেন।

হযরত আলী (রাঃ) ফাতেমার (রাঃ) ইহধাম ত্যাগের পর প্রায়ই মন মানুষিক খারাপ করে বসে থাকতেন। এমনকি ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর স্মৃতিকে মনে করে একটি কবিতা আবৃতি করেছিলেন। যে কবিতার মর্মার্থ ছিল “পার্থিব জগতের সকল প্রকার দুঃখ বেদনা, আমাকে ঘিরে আমাকে দুঃখের সাগরে ফেলে দিয়েছে। 

সর্বোপরি কথা হল হযরত আলী (রাঃ) তার প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দিলেও তার সাথে আচার ব্যবহার কথা বার্তা বলার সময় সর্বদা এহিসাব করে কথা বলতেন যে হযরত ফাতেমা (রাঃ) হলেন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মা (সাঃ)-এর আদরের কন্যা কলিজার টুকরা ও বেহেশতী রমণীদের সর্দার। 

যার কারণেই হযরত আলী (রাঃ) নবী দুলালী হযরত ফাতেমার (রাঃ) সাথে কোন মুহূর্তেই এমন কোন ব্যবহার করতেন না যা তার মনে ব্যথা পেত। তবে হযরত ফাতেমা ও (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে এমন কোন ব্যবহার করতেন না যাতে সে মনে ব্যথা পায়। 

হযরত আলী (রাঃ) যেমনিভাবে ফাতেমা (রাঃ)-কে অন্তরের অন্তর স্থল হতে ভালবাসতেন তেমনিভাবে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) যেখানে ছিল ভালবাসা আর শান্তি তাকে মনে প্রাণে ভালবাসতেন। যার কারণেই তাদের দাম্পত্য জীবন হয়েছিল মধুময় ।