হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 3

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 3

মাতা পিতার খেদমত

খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কালের অধ্যায়ে বিভিন্ন গটনা ও কথার মধ্যে মাতাপিতার ভক্তি সেবা ও শুশ্রূষার কথা আলোচিত হলে ও পাঠক পাঠিকাদের সামনে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বড় বোনদেরে বিবাহ হয়ে যাওয়া র পর পিতা মাতার সংসারে এক মাত্র ফাতেমাই ছিলেন স্নেহ মমতার অধিকারিনী। পিতামাতা উভয়ের মায়া মমতা, স্নেহ, পেয়ে ফাতিমা আনন্দেই জীবন কাটাতে লাগলেন, কিন্তু তার এ সুখও আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হলো না। 

কেননা হযরত খাদিজা (রাঃ) বিভিন্ন রোগ শোকে অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়লেন একদিকে বার্ধক্য অন্য দিকেবিভিন্ন দরনের রোগ যার কারণে আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল পাথেই ধাবিত হচ্ছে। হযরত খাদিজা রোগাক্রান্ত হয়ে প্রিয় নবী (সঃ)-এর সেবা যত্ন করতে পারছে না বলে সর্বদা দুঃখ করতেন। 

এবং প্রায়ই কান্নাভেজা কণ্ঠে আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে বলতে লাগলেন হে আল্লাহ আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছি আমার জীবনের জন্য কোন মায়া নেই আমার আফসুসের বিষয় হলো জীবনের শেষ মুহূর্তে পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর চরণ সেবার সুযোগ হতে বঞ্চিত হলাম। 

হয়ত আমার মত হতভাগী দুঃখিনী নারী এ পৃথিবীর মধ্যে খুজে পাওয়া যাবে না। বিবি খাদিজা (রাঃ)-এর আবেগ জড়ানো কান্না ভোজা কণ্ঠে কথাগুলো শুনে কিশোরী কন্যা ফাতেমা মায়ের হৃদয়ের চাপা দুঃখ যাতনা সবই অনুধাবন করতে পেরে ছিলেন। তাই কিশোরী কন্য ফাতেমা মায়ের চোখের তপ্ত অশ্রু নিজ হাতে মুছে দিয়ে মাকে জড়ায়ে মায়া মমতা ভরা কণ্ঠে বলেছিলেন। আম্মাজান আপনার স্থানে আমি ফাতিমা সর্বদা আব্বাজানের খেদমত ও পরিচর্যা করব। 

আমার জীবন থাকতে আব্বাজানের খেদমতের সামান্যতম ত্রুটি আমি করব না, বিধায় আপনি কোন চিন্তা করবেন না। মৃত্যু পথযাত্রী হযরত খাদিজা মেয়ের কথা শুনে খুবই আনন্দিত হলেন। আর আনন্দিত হওয়ার কথাও যেহেতু এই কিশোরী বয়সে তার মুখ থেকে যে সকল শান্ত্বনামূলক কথা বের হয়েছে তা সাধারণত এই বয়সের ছেলে মেয়েদের মুখ হতে বের হয় না ফাতেমার (রাঃ) কেবল খুশীই হলেন না বরং তাকে কাছে ডেকে বুকে টেনে স্বহস্তে তার পিঠে ও মাথায় হাত বুলায়ে তার জন্য প্রান ভরে দোয়া করলেন ।

হে আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে তোমার প্রিয় আবেদা বান্দী বানাও । তাকে জগতের বুকে মহা মর্যাদারপূর্ণ মাতৃ আসনে অধিষ্ঠিত করুন। দোয়া করার পর মেয়েকে আবার কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলায়ে মৃত্যু যাত্রী মাতা খাদিজা (রাঃ) বললেন- হে ফাতিমা! তুমি আমার প্রাণের মা। মনে রাখবে এ পৃথিবী হতে আমি চলে যাবার পর কোন দুঃখ করবেনা বরং আমার মাগফিরাতের জন্য সর্বদা দোয়া করবে। তবে তোমার কাছে আমার বিশেষ আপত্তি হল আমার মৃত্যুর পরে তোমার আব্বা জানের খেদমত এবং সেবা যত্নের ভার তুমিই গ্রহণ করবা। 
মায়ের মত সেবা যত্ন করে তাকে সুখী করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। মনে রেখ তোমার আব্বার খেদমত ও সেবযত্ন করলে ইহকাল ও পর কালে তোমার কল্যাণ হবে। আমি রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তোমাকে তোমার পিতার খেদমত করার সুযোগ দান করেন। এবং তার খিদমতের বিনিময় আল্লাহ যেন তোমার সমস্ত মানব জাতির জননীর আসন দান করেন । তোমার সুনাম সুখ্যাতি যেন পৃথিবীর বুকে চির দিন, অক্ষয় হয়ে থাকে সত্যি ! 

নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জননী মৃত্যু পথ যাত্রী নারী কূলের শিরমনি হযরত খাদিজার (রাঃ) হৃদয়ের একান্ত প্রার্থনা ও আর্শিবাদ বিশ্ব প্রভূ আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তা সত্যিই প্রতিফলিত হয়েছিল ৷ খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর সুনাম সুখ্যাতি যশ ও মর্যাদা বিশ্ব ব্যাপী অক্ষয় হয়ে আছে। এবং রোজ কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মুসলমান নরনারীর হৃদয়ে ও ইতিহাসের পাতায় চির ভাস্কর হয়ে থাকবে।

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মাতার ইহধাম ত্যাগ 

অধিকাংশ সীরাত কারীদের মতে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বয়স যখন মাত্র ১১(এগার) বছর তখন তার মাতা হযরত খাদীজাতুল কোবরা (রাঃ) নবুওয়াতের দশম সালে মক্কায় ইহধাম ত্যাগ করেন। ইহধাম ত্যাগের সময় হযরত খাদীজাতুল কোবরার (রাঃ) বয়স হয়েছিল পয়ষট্টি বছর । 

নবীয়ে দোজাহান হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেই নিজ মাথার পাগড়ীর দ্বারা তার কাফন তৈরি করে পরালেন এবং তাকে তার “জিহন” নামক স্থানে দাফন করলেন। আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেই প্রিয়তমা জীবন সঙ্গিনীর লাশ কবরে শোয়ালেন এবং মাটি চাপা দিলেন । 
প্রিয় পাঠক/পাঠিকার মনে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জাগ্রত হতে পারে যে কিভাবে জানাযা নামাজ না পড়ে কবরে রাখলেন এ প্রশ্নর সমাধানকল্পে বলা যেতে পারে যে তখন জানযার নামাযের হুকুম জারী হয়নি। 

প্রাণ প্রিয়াসীকে কবরে রেখে তাঁর কবরের উপর প্রিয়নবী (সাঃ) উপর হয়ে লম্বালম্বি ভাবে শুয়ে দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে ছটফট করতে লাগলেন। এভাবে করার কারণ হল তিনি মাটি যেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে চাপা দিতে না পারে। যার কারণেই দুই হাত দিয়ে মাটিকে জোর করে বাধা দিয়েছেন। 

অধিকাংশ সীরাত কারীদের ভাষ্য মতে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) মাত্র এগার বছর বয়সে মাকে হারিয়ে ইয়াতীম হলেন। মাকে হারীয়ে পিতা কর্তৃক লালিত পালিত হতে লাগলেন । খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ) নাবালেগ আবস্থায় মাকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। 

তবে কাঁদার কথাও কেননা মায়ের সাহচার্যই ছিল তার সময় কাটাবার প্রধান সম্বল। সেই মাতা তাকে ছেড়ে চলে গেছে এখন সে হতভাগা হয়ে দুঃখের সাগরে ভাসতেছে। তবে শুধু ফাতিমাই (রাঃ) যে দুঃখে শোকে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তা নয় বরং হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে হারিয়ে নবীযে দোজাহান হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চরম অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

সাথে সাথে আপন অভিভাবক চাচা আবু তালিব ও নারী কুলের শিরমনি হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ)-কে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়লেন। যার কারণেই প্রিয়নবী (সাঃ) এ বছরটির নাম রাখলেন শোকের বছর। এদিকে আদরের দুলালী হযরত ফাতিমা (রাঃ) মাকে হারিয়ে সারাক্ষন কাঁদতে লাগলেন তার শান্তনা দিবার মত কেহই ছিল না। 

একমাত্র পিতাই ছিল তাকে শান্তনা দেয়ার মত অভিভাবক। তবে পিতা শান্তনা দেয়ার মত থাকলেও তিনি ও তার শোকে দুঃখে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। শোকের বছর আববের খোদা দ্রোহী কাফিররা প্রিয়নবী (সাঃ)-এর উপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালাতে লাগলেন। যে খুবই অমানবিক ।

মেয়েকে শান্তনা দেয়ার মত যেমন ছিলেন হযরত খাদীজা। তেমনি ভাবে হযরত ফাতেমা (রাঃ) ছাড়া পিতাকে শান্তনা দেয়ার মত তার কেহ তার পাশে ছিল না ।
হযরত ফাতিমা (রাঃ) হৃদয়ের মনিকোঠা হতে মায়ের শোক ভূলতেই পারলেন না। বরং মায়ের কথা মনে পড়ার সাথে সাথে তার অজান্তেই দু চোখ হতে অশ্রুর বন্যা নামত। 

তবে আদর্শ মায়ের রেখে যাওয়া আদর্শবান মেয়ে কেবল চোখের পানি ফেলে বুক ভাসাতেন না বরং নীরবে বসে বসে মাতা পিতার জন্য দোয়া করতেন। অবশ্য একথা সর্ব জন স্বীকৃত যে করুনার প্রতীক রাহমাতুল্লীল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার মাতৃ হারা আদরের দুলালী কন্যাটিকে হৃদয়ের সমস্ত স্নেহ ও ভালবাসা দিয়ে তার মাতৃ অভাব পূর্ণ করবার জন্য সর্বত্তক চেষ্ট চালাতেন। 

শত চেষ্টা করলেও আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন ই ফাতেমা (রাঃ)-এর মন খারাপ দেখত তখনই তাকে আদর সোহাগ দিয়ে বিভিন্ন কথা বলতেন। পিতা যেমনি ভাবে মেয়ের অভাব পুরণের জন্য চেষ্টা করতেন তেমনি ফাতেমা (রাঃ) ও মায়ের মত অন্তরের ভালবাসা দিয়ে পিতার হৃদয়ের চাপা দুঃখ বেদনাকে দূর করার জন্য চেষ্টা করতেন