হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 1

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 1

এক নজরে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনপঞ্জি 

নামঃ ফাতিমা (রাঃ) সুহরা উপাধি। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সর্ব কনিষ্ঠা সাহেবজাদী।

জন্মগ্রহণ :

তিনি প্রিয়নবী (সাঃ)-এর নবুওয়াতের পাঁচ বছর পূর্বে নারীকুলের শিরমনি বিবি খাদীজা (রাঃ) আনহার ৫০ বছর বয়ক্রম কালে পবিত্র মক্কায় জনুগ্রহণ করেন।

বিবাহের পয়গাম :

নবী কন্য হযরত ফাতেমার (রাঃ) বয়স যখন ৫ বছর ১৫ মাস হয়েছিল তখন হতে তার বিবাহের পয়গাম আসতে শুরু করল।

বিবাহ :

বিবাহের সময় হযরত আলী (রাঃ)-এর আনহুর বয়স ছিল ২১ বছর আর নবী কন্যার বয়স হয়েছিল ১৫ বছর ৫ মাস ।
পিতৃহীনতার ব্যাথা : প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ২৯ বছর বয়ক্রম কালে প্রিয়নবী (সাঃ) ইহধাম ত্যাগ করেন।

ইহধাম ত্যাগ : নবীয়ে দোেজ্জাহান হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ইহধাম ত্যাগের মাত্র ছয় মাস পর নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) আনহা ২৯ বছর ছয়মাস বয়সে ইহধাম ত্যাগ করেন।
জানাযার ইমাম : প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্বাস (রাঃ) আনহু তার জানাযার নামাজ পড়ায়েছিলেন।

দাফন : তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।
আওলাদ : নবী কন্য হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ৫ জন ছেলে মেয়ে-১. হাসান (রাঃ); ২. হুসাইন (রাঃ); ৩. মুহসিন (রাঃ); ৪. উম্মেকুলসুম (রাঃ); ৫. যয়নব (রাঃ)।
দেহাবয়ব : নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর হুলিয়া মুবারকে প্রিয়নবী (সাঃ)-এর সাথে হুবহু মিল ছিল।
মর্যদা ও যোগ্যতা : হাদীসের কিতাব গুলোতে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) হতে ১৮টি বর্ণনা পাওয়া যায়।

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই
প্রথম অধ্যায়

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জন্ম ও পরিচয়

নবী দুলালী রমনী কুল শিরমনি হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)-এর পবিত্র নাম জানেনা এমন লোক পৃথিবীর মধ্যে কোথাও পাওয়া যাবেনা । একথা সর্বজন স্বীকৃত। কেননা তার সঠিক পরিচয় সম্পর্কে প্রতিটি মুসলমান জানার কথাও। যেহেতু তিনি হলেন সাইয়্যোদুল কাওনাইন পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পবিত্র দেহের অংশ নয়নের মনি কলিজার টুকরা ও সৈয়দ বংশের উৎস ধারা।

কেবল এটুকু বলেই তার সঠিক পরিচয় উপস্থাপনা করা মানেই হল তার সম্পর্কে জানা সম্পূর্ণতা হল না। যেহেতু তিনি ছিলেন খিলাফতে বাশেদার চতুর্থ খলিফা ইসলামের বীর সৈনিক শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ)-এর প্রিয়াতয়া মহিয়সী। মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম শহীদ যাদের নাম ইসলামের ইতিহাসে চির ভাস্কর হয়ে রয়েছে। সেই হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইনের শ্রদ্ধেয় জননী ।

হাদীসের এক বর্ণনা হতে জানা যায় নবী নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জোহরা জান্নাতী রমনী কুলের সরদার বলে সকলের কাছে পরিচিত
থাকবেন।
অন্য এক হাদীসের বর্ণনা থেকে জানা যায়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন জান্নাতী নারীদের মধ্যে চারিজন নারী সর্ব শ্রেষ্ঠ।

তারা হলেন ইমরানের কন্যা বিবি মরিয়াম মোজাহামের কন্যা বিবি আছিয়া, খোয়ালিদের কন্যা বিবি খাদিজা এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্নেহের দুলালী রমনী কুল শিরমনি হযরত ফাতেমা (রাঃ)।
প্রখ্যাত হাদীস গ্রন্থ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে উল্লেখ আছে প্রিয়নবী (সাঃ) বলেন কলিজার টুকরা নয়নের মনি হযরত ফাতেমা হল আমার দেহের অংশ।

তাকে যে জন রাগান্তিত করল মনে রাখবে সে আমাকে ক্রোধান্বিত করে আমার সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাল। মু'মীনদের মা হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) বলেন হে নবী নন্দিনী ফাতেমা তোমার পবিত্র মাথার একগাছি কেশের
মর্যাদা নিয়েও যদি আমি জন্ম নিয়ে ধরাধামে আসতে পারতাম তাহলে আমি নিজেকে গর্ব ও ধন্য মনে করতাম ।

অন্য এক বর্ণনায় দেখা যায় উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন আমি পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পরে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ)-কে ছাড়া সর্ব গুনে গুনান্বিত এত উত্তম লোক আর কাউকে দেখিনি।
উপরে বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে একথাই প্রমাণিত হল যে সারা মুসলিম জাহানের মধ্যে নবী দুলালী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ)-এর সম্মান মর্যাদা সকলের ঊর্ধ্বে।

সম্মান ও মর্যাদার দিক দিয়ে ইহজগতে যেমনি সকলের শীর্ষে তেমনি পরজগতের বেহেশত বাসিনী নারীদের সর্দার রূপে গন্য হবেন। ফাতেমা (রাঃ) কেবল প্রিয় নবী (সাঃ)-এর স্নেহের দুলালী ও কলিজার টুকরা ছিলেন বলেই সম্মান মর্যাদার দিক দিয়ে সকলের শীর্ষে একথা বলা ঠিক হবেনা। কেননা তিনি ছিলেন ধর্ম জ্ঞানে গুনে, চরিত্রে মহিমায় ইবাদত বন্দেগীতে, ত্যাগ সাধনায়, কষ্ট সহিষ্ণুতায় সকল নারীদের ঊর্ধ্বে। তার মধ্যে সর্বগুণের সমাহার ঘটেছিল বলেই তো তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

হারত ফাতেমা (রাঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-এর দরবারে কোন প্রয়জনে আগমন করলেও প্রিয় নবী (সাঃ) তার মর্যাদা ও সম্মানার্থে এগিয়ে গিয়ে তার হাতে ধরে নিয়ে এসে নিজের কাছে বসতে দিতেন এবং বসার সাথে সাথেই স্নেহ মায়া মমতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হাত ও মাথায় স্নেহ চুম্বন করতেন।

অন্য এক বর্ণনা হতে জানা যায় যে, “প্রিয় নবী (সাঃ) কোথাও কোন উদেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় বিবি ফাতিমার সাথে দেখা করে তার কুশলাদি জেনে যেতেন এবং বাহির হতে ফিরে এসেও সর্ব প্রথম বিবি ফাতেমার (রাঃ) সাথে দেখা করতেন এবং তার কুশলাদি জানার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন করতেন।”

যাই হোক এখন হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর পরিচয় সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য বর্ণনা হতে এ কথা সম্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয় যে প্রিয় নবী (সাঃ) নবুওয়াতের পাঁচ বছর পরে ২০শে জমাদিউল আখের শুক্রবার ভোরে আরব ভূখন্ড আলোকিত করে মদীনায়ে তাজেদার নবীয়ে দো'জাহান হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পবিত্র ঘরে ভূমিষ্ট হলেন নবী দুলালী কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)।

সত্যি, নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) জোহরার মনভুলানে সুন্দর ফুট ফুটে  পবিত্র চেহারা দেখে মনে হল চির শান্তিময় বেহেস্তের এক অপূর্ব জ্যোতি নিয়ে সকলকে খুশি করতে ধরাধামে নেমে এসেছে। গোলাপ ফুলের মত মন কেঁড়ে নেয়ার একটি টুকটুকে শিশু তার সুন্দর চেহারায় নবী গৃহ আলোকিত হয়ে গেল । শুধু নবী গৃহ নয় চন্দ্ৰ মুখলূকাত আকাশের মিটি মিটি তারকা রাজি লজ্জিত হল ।

একথা সর্বজন বিদিত যে সাধারণত নারীদের প্রসব বেদনারও প্রসব কালে কমবেশী সকলেরই কষ্ট হয় আর কষ্টটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় কষ্ট বিধায় প্রসব কালে নারীদের কাছে সাহায্য কারী হিসেবে নারীদের থাকা উচিত । তদ্রূপই ভাগ্যবর্তী নারী হযরত খাদীজার (রাঃ)-কে প্রসব কালে সাহায্য সহযোগীতা জাল্লাহ শানুহু বেহেশত হতে চার জন নেক রমনীকে তার কাছে প্রেরণ করলেন।

নেক রমনীদেরকে দেখা মাত্রই নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ও খাজিদা (রাঃ) বুঝতে আর বাকী রইলনা যে তাদের আদরের মানিক নয়নের মনি নবজাত শিশু কন্যা ভবিষ্যতে এক জন জগৎ বরেন্যা রমনী রূপে খ্যাতি লাভ করবে। শুধু খ্যাতি নয় মুসলিম জাহানের প্রতিটি মুসলিম নরনারী তাঁর পবিত্র নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে নিজেকে ধন্য মনে করবে।

যার কারনেই ফুট ফুটে চেহারার অধিকারী নবজাত কন্যা ভূমিষ্ট হওয়ার কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেই নবী মুহাম্মদ (সাঃ) মনের আনন্দে সদ্য ফোটা আদারের পুষ্পটি কোলে তুলে নিলেন আদরের শিশু মানিককে কোলে নিয়ে প্রাণ ভরে স্নেহ চুমু খেলেন আর দুহাত তুলে আবেগ জড়ান কন্ঠে প্রাণ ভরে দোয়া করলেন। দোয়ার বাণী গুলি হল :
তুমি মুসলিম জাহানে রমনী কুলের শ্রেষ্ঠ আদর্শ হও।

জগতে তোমার নাম চির স্মরণীয় হয়ে থাকুক। জগতে প্রতিটি মুসলিম নরনারীর কাছে তুমি মাতা রূপে তাদের হৃদয়ের মনি কোঠায় চির ভাস্কর হয়ে থাক। নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শুভ জন্মের সন সম্বন্ধে কিছুটা মত পরিলক্ষিত হয়। কোন কোন ইতিহাস বেত্তারা বলেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবূওয়াত লাভের পাঁচ বছর পূর্বে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)-এর শুভ জন্ম হয়।

আবার কোন কোন ইতিহাস বেত্তারা বলেন নবুওয়াতের পাঁচ বছর পরে জন্ম হয়। তবে ঐতিহাসিক বিদদের বর্ণিত মতদ্বয়ের মধ্যে শেষোক্ত মতটি অধিকতর প্রনিধান যোগ্য তবে শেষোক্ত মতের সমর্থনের পিছনে একটি যুক্তি পরিলক্ষিত হয়।
নির্ভর যোগ্য এক হাদীসের বর্ণনা হতে জানা যায় প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন যে নারী কুলের শিরমনি হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শুভ জন্মের কিছুদিন পূর্বে কোন এক সময় হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে সংবাদ জ্ঞাপন করে গিয়েছিলেন !

যে হে নবীয়ে দোজাহান এবারেও আপনার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। যে কন্যা হবে জগৎ বরেন্যা ও সকল রমনীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থানীয়া। হযরত খাদিজা (রাঃ) স্বয়ং বলেছেন কলিাজার টুকরা নবজাত শিশু ফাতিমা ভূমিষ্ট হওয়ার কিছু দিন পূর্বে একদা প্রিয় নবী (সাঃ) আমাকে বললেন হে ভাগ্যবতী খাদিজা।

হযরত জিব্রাঈল ফিরিস্তার মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি যে এবারে ও তোমার গর্ভে একটি কন্যা সন্তান অবস্থান করছে, যে কন্যা হবে আবেদা উত্তম চরিত্রের অধিকারিনী ও মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ আদর্শ । উক্ত ঘটনা হতে একথাই প্রমান হল যে নবী মুহাম্মদের (সাঃ) নবুয়ত লাভের পরই নবী দুলালী হযরত ফাতেমা জোহরার (রাঃ) জন্ম হয়েছে। যেহেতু প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নবুওয়াতের পূর্বে হযরত ফাতেমাতুজ জোহরার (রাঃ) জন্ম হলে তার জন্মের পূর্বে হযরত জিব্রাঈল ফেরেস্তার সান্নিধ্য ও বাক্যলাপ কোন ক্রমেই সম্ভব নহে ।

এখানে উল্লেখ্য বিষয় নবুওয়ত লাভের পূর্বে কোন সময়ই হযরত জিব্রাঈল ফেরেস্তা প্রিয়নবী (সাঃ)-এর নিকট আগমন করেননি। অন্য এক হাদীসে বর্ণনা হতে জানা যায় প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) মাতৃগর্ভে স্থান নেয়ার পূর্বে হযরত জিব্রাঈল ফেরেস্তা আমার নিকট উপস্থিত হলেন। তারপবিত্র হাতে ছিল একটি বেহেস্তী মেওয়া।

উক্ত মেওয়াটি তিনি আমার হাতে দিয়ে আমাকে খেতে বললেন। আমি হযরত জিব্রাঈলের বিশেষ নির্দেশে সেই মেওয়াটি খেয়ে ফেললাম । সত্যে কথা বলতে কি উক্ত মেওয়াটিতে এমন একটি অপূর্ব ঘ্রাণ ছিল যা আমি পরবর্তী জীবনে দুনিয়ার নামী দামী ফল খেয়েছি এর কোন ফলের মধ্যেই এমনি ঘ্রান পাইনি। এর কিছু সময়ের মধ্যেই আমার আদরের কন্যা ফাতেমা তার জননী জঠরে স্থান নেয়।

সত্যি শুনলে আশ্চর্য লাগার কথা নবজাত শিশু হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)-এর জন্মের পর থেকে আমি তার পবিত্র মুখে সেই বেহেস্তী মেওয়াটির ঘ্রান পেয়েছি। নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)-এর জন্মের সময়ের একটি ঘটনা আলোকপাত করেছি ভাগ্যবতী নারী হযরত খাদীজা স্বয়ং বলেছেন ফাতেমা আমারা উদরে থাকা অবস্থায় আমি কোন সময়ই কোন কষ্ট অনুভব করতাম না ।

এমন কি যে দিন ফাতিমা দুনিয়ার বুকে পদার্পন করবে! সেদিন হঠাৎ আমার প্রসব বেদনা শুরু হল এ সময় আমার গৃহে আমাকে সাহায্যে করার মত কোন স্ত্রী লোক আমার নিকট ছিলনা। আমি সম্পূর্ণ একা বাস করেছিলাম গৃহে যাই হোক আমি একজন বাদী পাঠিয়ে আমার পাড়া প্রতিবেশি ও কতিপয় আত্মীয়কে সংবাদ দিলাম আমাকে সাহায্য করার জন্য উপস্থিত হতে।

আমার আত্মীয় স্বজন সকলেই আগ থেকে জানত আসন্ন বিপদের কথা। কিন্তু তারা জেনেও কোন কর্ণপাত দিত না ।
আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলাম বলেই আমার প্রসব বেদনার বিপদের সময় কেহই আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি।

তারা আসলনা তো বটে তার পর ও আমার প্রেরিত বাদীকে বলে দিল আরব জাহানের অনেক ধনাঢ্যবান ও শিক্ষিত যুবক হযরত খাদীজার পানি গ্রহণের জন্য আশাবাদী ছিল কিন্তু হযরত খাদিজা সকল যুবকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শেষ পর্যন্ত অশিক্ষিত নিরস্ব দরিদ্র যুবক মুহাম্মদ কে পতিত্বে বরণ করে আমাদের বংশের হ্যের ও আমাদের মুখে চুন কালী মেখে দিয়েছে এবং পরে ও আবার অশিক্ষিত যুবক মুহাম্মদের নব ধর্ম গ্রহণ করেপূনরায় আমাদেরকে অপমানিত করেছে।

এহেন অবস্থায় তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকতেই পারে না। আমার প্রেরিত বাদীর নিকট হতে সব কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম আল্লাহ তায়ালার সাহায্যেই সবচেয়ে বড় সাহায্য । সে ইচ্ছা করলে মুহূর্তের মধ্যে বিপদ হতে রক্ষা করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে বিপদের সহিম গহবরে ও ফেলতে পারে। এহেন চিন্তা ভাবনা করতেছি এমনি সময় দেখতে পেলাম আমার গৃহখানি অপূর্ব আলোকে আলোকিত হয়ে গেছে।

পশ্চাতে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলাম চারজন জ্যোতিময়ী রমনী আমার পিছনে দন্ডায়মান। সত্যিই আমি তাদেরকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম । আর অবাক হবার কথাও যেহেতু আর কোনদিন তাদেরকে দেখতে পাইনি। কিছুক্ষণ পরে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে ভীত ভাবে তাদের পরিচয় জিজ্ঞাস করার সাথে সাথে তাদের মধ্যে একজন আমাকে অভয় দিয়ে বললেন মা! আপনার কোন ভয় নেই!

আপনি সেই আল্লাহর তায়ালাকে স্মরণ করতে ছিলেন আমরা তারই নির্দেশে আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি। আমার নাম হল হাওয়া ।
এরপর দ্বিতীয় রমনী পরিচয় বললেন- আপনার খেদমতের জন্যই আমি এসেছি। আমি মিশরের বাদশাহ ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া । আর একজন বললেন আমি হলাম হযরত ঈসা নবী (আঃ)-এর মাতা, আমার নাম হল মরিয়ম।

আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নির্দেমে আমি আপনার সাহায্য করতে এসেছি সবশেষে চতুর্থ রমনী বললেন আমি হলাম হযরত মুছা নবী (আঃ)-এর ভগ্নি কুলসুম আমি ও আল্লাহর তায়ালার নির্দেশে আপনার সাহায্য করতে এসেছি ভাগ্যবতীময়ী হযরত খাদিজা (রাঃ) বললেন প্রসব বেদনার কঠিন বিপাদের সময় !

আমি তাদেরকে আমার নিকটে পেয়ে অত্যাধিক খুশী হলাম শুধু খুশী নয় মনে মনে ভাবলাম আমিই অত্যান্ত ভাগ্যবতী, প্রিয় পাঠক পাঠিকা গণ হযরত ফাতেমা জোহরা (রাঃ)-কে বিশ্ব বরেণ্য আদর্শ রমনী রূপেই দুনিয়ায় পাঠানই ছিল রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার একান্ত ইচ্ছাও উদ্দেশ্য। 

যার কারণেই তাকে সর্ব গুনে গুনান্বিত করে দুনিয়াতে পাঠালেন। প্রিয় নবী (সাঃ) ফাতেমা দুনিয়াতে আগমন করার পরই তার পবিত্র নাম রাখে ছিলেন “ফাতেমা” তবে ফাতেমা ছাড়াও আর ও কয়েকটি গুন বাচক নাম ছিল যেমন-জোহরা, যাকিয়া, রাজিয়া, মারজিয়া, বতুল ও সাইয়্যোদা ইত্যাদি ।

তার প্রত্যেকটি নাম রাখার পিছনে যথার্থ কারণ রয়েছে যা নিম্নে প্রদত্ত হল :
জোহরা : জোহরা শব্দের অভিধানগত অর্থ হল কুসুম কলি । প্রকৃতপক্ষে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ) একটি অনুপম সুন্দর সুরভিত কুসুম কলি কেননা তিনি রূপে গুনে চরিত্রে ফুলের মতই সুষমা মন্ডিত ছিলেন । যার কারণেই তার এই পবিত্র নামটি ছিল সবচেয়ে প্রিয় এবং আদরের নাম ।

যাকিয়া : যাকিয়া নামে তাকে আখ্যায়িত করার বিশেষ কারণ হল তিনি যেমন সতী সাধ্বী ছিলেন, তেমনি ভাবে কঠোর ত্যাগ সাধনার দ্বারা বিভিন্ন খারাবীয়াত হতে নিজের দেহ মন এবং আত্মাকে সর্বদা পবিত্র রাখতেন ।
রাজিয়া, মারজিয়া : রাজিয়া এবং মারজিয়া নামটি রাখার অন্যতম কারণ হল তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রেই অর্থাৎ সুখে দুঃখে আরাম আয়েশ, বিপদে আপদে পরিপূর্ণ ভাবে আল্লাহ তায়ালার মরজীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন।

এছাড়া তিনি অধিক সুখ শান্তির মধ্যে থেকেও আনন্দে আত্মহারা হতেন না আবার অধিক দুঃখ কষ্টের মধ্যে থেকেও হতাশার মধ্যে দিন কাটাতেন না। বরং সুখে দুঃখে সর্বক্ষেত্রেই আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ কামনা করতেন ৷
বতুল : বতুল শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ভোগ লিপসা বর্জন কারিনী বতুল নাম রাখার বিশেষত্ব হল তিনি পার্থিব ভোগ লিপসা আরাম আয়েশ সব কিছুই একেবারেই বর্জন করেছিলেন
সাইয়্যোদা : সাইয়্যোদা শব্দের শাব্দিক অর্থ হল শ্রেষ্ঠা এবং সরদার।

তিনি সাইয়্যোদা নামে ভূষিত হওয়ার কারণ হল তিনি গুনান্বিত হয়ে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারীনী হবে তেননি ভাবে পর কালে বেহেস্তে ও হবেন রমনীদের সর্দার বা সম্রাজ্ঞা ।