হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 13

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 13

মধুর সম্পর্ক

এ কথা বাস্তর সত্য যে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) অভাব অনাটনের সংসারে দামপত্য জীবন কাটালেও তাদের সম্পর্ক ছিল মধুর। তাদের সম্পর্কের মধ্যে দারিদ্র্যের কষাঘাত ফাটল ধরাতে পারেনি; বরং তারা অভাব অনাটন ও শত কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করেও প্রকৃত দাম্পত্য সুখ এবং মানসিক শান্তি পরিপূর্ণভাবে ভোগ করে ছিলেন। 

তারা তাদের দাম্পত্য জীবনের প্রতি পদে পদেই প্রিয় নবী (সাঃ)-এর পবিত্র সুখের বাণী ও উপদেশগুলো স্মরণ করেই জীবনের সকল কার্য সম্পন্ন করতেন। যার কারণেই দেখা গেছে শত কষ্ট অভাব অনাটন তাদেরকে তাদের রাসূল প্রদত্ত আদর্শ হতে এক মুহূর্তের জন্য ও হটাতে পারেনি। তাদের উত্তম চরিত্র ও মহৎ গুণাবলীর মধ্যে সহিষ্ণুতা, অল্পে তুষ্টি, ধৈর্য্য সহ্য ছিল প্রধান স্বভাব। 

সত্যি তারা প্রিয় নবীর (সাঃ) আদর্শকে সামনে রেখেই পার্থিব জগতের সুখ শান্তি আরাম আয়েশ উপেক্ষা করে পর কালীন স্থায়ী সুখ শান্তির প্রত্যাশায় অভাব অনাটন ও দুঃখ কষ্টের সংসারটিকে প্রগার ভাল বাসা ও মায়া মমতার বন্ধনে বেহেশতে পরিনত করেছিল। 

শিক্ষা দীক্ষা, বংশে গৌরবে সকল সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে ইসলামের বীর সৈনিক হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন সকলের শীর্ষে অবস্থান কারী ব্যক্তিত্ব। কিন্তু কোন সময়ই তিনি নবীজির কন্যা বিবি ফাতেমার (রাঃ) সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না বরং বিনম্র ব্যবহার করতেন। 

সত্য অপ্রিয় হলেও বলতে হয় দাম্পত্য জীবনের সুখ-দুঃখের সংসারে টুকি-টাকি ব্যাপারে কোন সময় হযরত আলীর (রাঃ) মন মানুষীক খারাপ হলেই মনকে এভাবে শান্তনা দিতেন যে নবী কন্যার সাথে খারাপ ব্যবহার করা মানেই হলে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সাথে খারাপ ব্যবহার করা। 

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু ভেবে দেখুন হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত ফাতেমা (রাঃ) কত উন্নত মহৎ আদর্শ নিয়ে দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন। তদ্রুপই নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) হযরত আলীর (রাঃ) গৃহে এসে সাংসারিক জীবনের কোন ব্যাপার নিয়ে মানুষীক খারাপ করার সাথে সাথেই পিত্রালয় হতে স্বামীগৃহে আসার সময় প্রিয় (সাঃ) যে কথাটি বলেছিলেন তা হৃদয়ের মাঝে স্থানদেয়। 

প্রিয় নবী (সাঃ) নবী দুলালী হযরত ফাতেমাকে (রাঃ)-কে আলী গৃহে বিদায় দেয়ার সময় আবেগ জড়ান কণ্ঠে বলেছিলেন “মা” মনে রাখবে স্বামীর সন্তুষ্টিতেই আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি । 

হযরত আলী (রাঃ) অভাব অনাটনের সংসারে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে বসন ভূষণে সুসজ্জিত করে না রাখতে পারলেও আদর সোহাগ ও ভাল ব্যবহার দ্বারা হযরত আলী (রাঃ) তাকে আপন করে নিয়েছিলে হযরত আলী (রাঃ) প্রিয়তমা স্ত্রী জীবন সঙ্গিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে অন্তরের অন্তর স্থল দিয়ে ভাল বাসতেন শুধু ভাল বাসাই নয় বাস্তবেও তার মতের বিরুদ্ধে কোন কাজই করেনি। 

পক্ষান্তরে নবীজির কালিজার টুকুরা হযরত ফাতেমা (রাঃ) অভাব অনটনের সংসারে জীবন যাপন করেছেন বটে কিন্তু কোন সময়ই স্বামী হযরত আলীর (রাঃ) সাথে রুঢ় ব্যবহার করেনি, সাতে তার মনে কষ্ট পেত বরং তার মধু মাখা ব্যবহার ও আচরণের মাধ্যমে তার হৃদয়ের মনি কোঠায় স্থান পেয়েছিল । হযরত আলী (রাঃ) নিজেই বলেছেন হযরত ফাতেমা (রাঃ) অভাব অনাটনের সংসারে জীবন যাপন করলেও স্বামীর প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ও ভাল বাসা ছিল । 

যে ভাল বাসার মধ্যে কোন স্বার্থ লুকায়িত ছিল না। সকল স্বার্থের উদ্ধেই ছিলাম আমি। শুধু ভালবাসা নয় স্বামীর অভাব অনাটনের সংসারের প্রতি লক্ষ্য করেই নিজের সকল চাহিদা পরিত্যাগ করে কষ্টকে বরণ করে নিয়েছেন। অত্যাধিক প্রয়োজনীয় জিনিসের আবদার করেও স্বামীকে বিপদ গ্রস্থ করেন নি। হযরত ফাতেমা (রাঃ) স্বামীগৃহের সকল কাজই নিজ হাতে সম্পন্ন করতেন। 

অনেক সময় নবী কন্যা হিসেবে অনেকেই সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে চাইতেন। কিন্তু ঐ সময় ও নবী দুলালী পবিত্র মুখ হতে বের হয়ে আসত “নিজের হাতে স্বামী গৃহের কাজ সম্পন্ন করার মধ্যেই আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি। হযরত ফাতেমা (রাঃ) যে নিজ হাতেই স্বামী গৃহের কাজ করতেন তা একটি ঘটনার মধ্যে দিয়েই ফুটে উঠেছে। 

নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) নিজেই বলেছেন, কোন এক রাত্রে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অসুস্থতা এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ছিল যে অজু করে নামায আদায় করা ও বিপদ মনে হত। 

কিন্তু ঐ সময় ও তাই য়াম্মুমের প্রথা প্রচলিত হয়নি। যাই হোক শত কষ্টের মধ্যে ও নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) অজু করে ফজরের নামায পড়লেন। আমি জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে রওয়ানা হলাম। মসজিদ হতে এসেই দেখতে পেলাম অসুস্থ ফাতেমা বসে বসে যাতায় আটা ভাঙ্গতেছেন। 

সত্যি, তার এহেন দৃশ্য দেখে আমার চোখে পানি এসে গেল আমি ফাতেমার মাথায় হাত রেখে বললাম হে ফাতেমা, তুমি অসুস্থতা নিয়ে যাতায় আটা ভাঙ্গতে শুরু করলে কেন? অসুস্থ ফাতেমা মুচকী হাসি দিয়ে বললেন হে স্বামী! আপনার খুশীতেই রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার খুশী বিধায় শত কষ্ঠের মধ্যেও আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালন করে ও আপনার খেদমত করে আমি আত্ম তৃপ্তি পাই। 

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর পবিত্র মুখের কথা শুনে হযরত আলী বললেন নবীর কন্যার আমল ও নবীর মত। অন্য এক বর্ণনা হতে জানা যায় হযরত ইমাম হাসান হোসায়েন জন্মগ্রহণ করেছেন হোসায়েন ফাতেমার কোলে অর্থাৎ দুগ্ধ পোষ্য শিশু। 

ঐ দিন নবী দুলালী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) যাতায় আটা পিষতে শুরু করেছেন এমনি মুহূর্তে হঠাৎ শায়িত হোসেন দুধের জন্য কেঁদে উঠলেন । হযরত আলী (রাঃ) হোসেনকে কোলে নিয়ে আদর সোহাগ চুমু খেয়েও কাঁদা থামাতে পারলেন না। 

শেষ পর্যন্ত হযরত ফাতেমা (রাঃ) ক্রন্দরত হোসেনকে কোলে নিয়েই অতি কষ্ট করে যাতা ঘুরাতে লাগলেন। আর ঐ সময় যাতা না ঘুরায়ে উপায় নেই। যেহেতু স্বামী হযরত আলী (রাঃ) কাজের লক্ষ্যে বাইরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু বাইরে যাবার সময় হযরত ফাতেমার (রাঃ) এহেন কষ্ট দেখে হযরত আলীর অন্তরে খুবই দুঃখ পেলেন, আর দুঃখ পাওয়ার কথাও যেহেতু নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) তার গৃহে এসে অবিরাম কষ্টই করেছে। 

যাই হোক হযরত আলী (রাঃ) গৃহ হতে বের হওয়ার সময় তার পবিত্র চেহারায় বেদনার্ত দৃশ্য দেখে ফাতেমা (রাঃ) খুবই কষ্ট পেলেন। সে মনে মনে ভাবতেছে হয়তোবা স্বামী আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) কাজ শেষে গৃহে ফিরে এলেন। 

সারা দিনে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের শেষে বিশ্রামের পরে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) হযরত আলীকে (রাঃ) প্রেম ভালবাসা; নিবেদন করে বিনয়ী কণ্ঠে বললেন হে স্বামী বাইরে যাবার মুহুর্তে আপনার চেহারা এভাবে বিষণ্ন দেখান কেন, এর কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না জানতে পরব ততক্ষণ আমার মনে শান্তি ফিরে আসবে না । 

আপনি মনে মনে ভাবতেছেন যে আপনার মলিন চেহারা দেখলে আমি মনে কোন কষ্ট পাইনা। হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর হৃদয় গ্রাহী ভালবাসার পরশ মূলক কথা শুনে হযরত আলী (রাঃ) বললেন না, তেমন কিছু নহে, তবে গৃহ হতে বের হবার সময় শিশু কোলে নিয়ে যাতা ঘুরানোর দৃশ্য দেখে আমার মনে খুব দুঃখ লেগেছিল। হযরত আলী (রাঃ)-এর কথা শুনে হযরত ফাতেমা (রাঃ) মুচকি হাসি দিয়ে বললেন স্বামী গৃহের শত কষ্টের বিনিময়ে যদি নারী জীবনের অমূল্য রত্ন স্বামীর মুখে এক বিন্দু হাসীর ঝলক ফুটান যায় তার মধ্যেই আমি শান্তির অমীয় সুধা খুজেপাই।

 সবচেয়ে আনন্দের কথা হল স্বামীর খুশীতে বিশ্বপ্রভু আল্লাহ তায়ালা খুশী । যেই পালন কর্তা আমাকে ও আপনাকে সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সত্যি, আদর্শের প্রতীক নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর পবিত্র মুখের পবিত্র কথা শুনে নবী জামাতা হযরত আলীর (রাঃ) দু'চক্ষু দিয়ে মনের অজান্তেই আনন্দাশ্রু বয়ে চলল।

প্রিয় পাঠক/পাঠিকাগণ, হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও হযরত আলীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও দাম্পত্য জীবনের মিলন মোহনায় সাংসারিক টুকিটাকী নিয়ে এক আধটু মনোমালিন্য ঘটেনি তা নয়। আর এটা ঘটা স্বাভাবিক, যেহেতু মানুষ তো ফেরেশতা না । মানুষের চলার পথে টুকি-টাকি ভুল ভ্রান্তি ঘটবেই আর তা না ঘটলে মানুষ নামের স্বার্থকতা হত না। 

মানুষ হিসেবে দাম্পত্য জীবনে হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-এর মধ্যে দু'এক সময় মনো মালিন্য দেখা দিয়েছে। কিন্তু তাদের এহেন মনো মালিন্যকে সময়ই সীমাতিক্রম করতে পারেনি, কিছু সময়ের মধ্যে তা সমাধান হয়ে ভালবাসার হাতকে প্রসারিত করেছে। 

কোন এক বর্ণনা হতে জানা যায় কোন এক দিনের ঘটনা- হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-এর মধ্যে কোন ব্যাপার নিয়ে কোথপকথন চলছিল, এমন সময় হঠাৎ করে হযরত ফাতেমার (রাঃ) মুখ হতে একটি কড়া বাক্যে বের হল। 

ফাতেমার (রাঃ) মুখ হতে এহেন কড়া বাক্য- বের হওয়ায় হযরত আলী (রাঃ) একটু ব্যথিত হলেন। আর ব্যথিত হওয়ার কথাও যেহেতু যার কাছ হতে সর্বদাই সম্মান ও ভালবাসা মূলক আচারণ পেয়ে থাকে, তার মুখ হতে এধরনের বাক্য কের হওয়ায় দুঃখ পাবার কথাই, যাইহোক হযরত আলী (রাঃ) ফাতেমার (রাঃ) সাথে অভিমান করে তাকে কোন কিছু না বলেই গৃহ হতে বের হয়ে পড়লেন। এমনকি রাতেও গৃহে ফিরে আসেনি। 

তাদের এহেন মন মালিন্যের কথা প্রিয় নবী (সাঃ)-এর কানে গেল। আল্লাহর নবী হযরত আলীর (রাঃ) খোজে বের হলেন, খোজতে খোজতে হঠাৎ দেখলেন নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) ফরাশ বিহীন মসজিদে ধুলাবালির মধ্যে ওয়ে আছেন। আল্লাহর নবী (সাঃ) তাকে এহেন অবস্থায় দেখে “হে আবু তুরাব" (ধুলাবালির জনক) বলে ডেকে উঠলেন এবং বললেন অতি শ্রীঘ্রই হে চল। 

আল্লাহ নবীর (সাঃ) নির্দেশে হযরত আলী (রাঃ) প্রিয় নবীর (সাঃ) সাথে গুহে চললেন, এর পরে রাসুলে পাক (সাঃ) উভয়কে নসীহত করে উভয়ের মধ্যকার মনোবিবাদ মিটায়ে দিয়ে বললেন, তোমরা সুখে থাক । অন্য এক বর্ণনায় দেখা যায় কোন এক সময় কোন এক ব্যাপারে নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) নবী কন্যা হযরত ফাতেমার (রাঃ) প্রতি কষ্ট হয়ে এমন এক কাজ করে বসলেন। 

যাতে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে গৃহত্যাগ করলেন। কেবল গৃহ ত্যাগ করলেন তা নয়। আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে অভিযোগ করলেন। হযরত ফাতেমার (রাঃ) সাথে সাথে হযরত আলী (রাঃ) ও অবনত সমস্তকে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সম্মুখে বসে বইলেন নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) সামনেই বসে রইলেন। 

আর নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) আলীর (রাঃ) সামনে তার বিরুদ্ধে পিতার কাছে অভিযোগ করলেন। আল্লাহর নবী (সাঃ) হযরত ফাতেমার কথা শ্রবণ করে হযরত আলী (রাঃ)-কে কোন কিছু জিজ্ঞান না করেই ফাতেমার দিকে চেয়ে বললেন হে ফাতেমা সকল ক্ষেত্রেই যে হযরত আলী (রাঃ) তোমার মন যোগায়ে চলবে এটা হতে পারে না । তোমারও ধৈর্য্য ধারণ করে চলা উচিত। 

পিতা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কথা শুনে হযরত ফাতেমা (রাঃ) কোন কিছু বললেন না। তবে নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিতভাবে স্বামীর গৃহে চলে গেলেন। এখানে উল্লেখ্য বিষয় হল উক্ত ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রিয় নবী (সাঃ) কেবল আদরের দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) কেই শিক্ষা দিলেন এ কথা ঠিক না। 

তবে পিতার কথার মাধ্যমে হযরত ফাতেমা (রাঃ) অনুধাবন করতে পারলেন যে সামান্য টুকিটাকি বিষয় নিয়ে পিতার কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে আসা মোটেই ঠিক হয়নি। তবে এ সামান্য ঘটনার মধ্যে দিয়ে হযরত আলী (রাঃ) ও যথেষ্ট শিক্ষা পেয়েছিলেন। 

এ সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ) নিজেই বলেছেন যে, আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমার ভুল শোধরায়ে দিয়েছেন একথা বাস্তব সত্য কথা তবে আমার মধ্যেও ভাব সৃষ্টি হল যে আসলেতো প্রকৃত পক্ষে আমিই অপরাধ করেছি, নবী দুলালী হযরত ফাতেমার (রাঃ)-এর সাথে যদি আমি এমনি ধরনের ব্যবহার না করতাম তা হলে ফাতেমা (রাঃ) কোন ক্রমেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে আসত না, এবং তিনি পিতার নিকট লজ্জিত ও হত না । 

এ ব্যাপারে আমি অনেক দুঃখ পেলাম। তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আল্লাহ যে কয়দিন দুনিয়ায় বাচাবে কোন সময়ই নবী দুলালী হযরত ফাতেমার হৃদয়ে কষ্ট দিব না। এভাবে দম্পতি যুগলের মন পরিষ্কার হয়ে আন্তরিকতা ও ভালবাসার পথ সুগম হল। নবী কন্যা কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ) জীবিত থাকা কালীন হযরত আলী (রাঃ) বিবাহ সম্পর্কে ইতিহাস বেত্তাদের মধ্যে কিছু মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। 

কোন কোন ইতিহাস বেত্তারা এভাবে লিখেন যে নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) বিবাহ করে নবী দুলালী হযরত ফাতেমার ভয়ে তার বাসগৃহে না এনে অন্য এক স্থানে স্ত্রীকে রেখে দিয়েছেন। তবে ইতিহাস বেত্তাদের এহেন উক্তির কোন সত্যতা নেই। 

মূল ঘটনা বর্ণনা সাপেক্ষে বলা যেতে পারে যে কোন সময় কুরাইশ প্রধান আবু জেহেলের কন্যার সঙ্গে হযরত আলীর (রাঃ) বিবাহের ব্যাপারে এক প্রস্তাব উঠেছিল, এবং সেই প্রস্তাবের পরি প্রেক্ষিতে কন্যা পক্ষ থেকে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নিকট অনুমতি চেয়ে প্রার্থনা করা হল- আল্লাহর নবী (সাঃ) তাতে খুবেই বেজার হলেন আর বেজার হওয়ার কথাও যেহেতু নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) আলী গৃহেই আছেন, আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আগন্তুক লোকটিকে বলে দিলেন তোমার দেয়া প্রস্তাব টি যেমনি অসঙ্গত তেমনি ভাবনীয় বিষয়। 

প্রিয় নবী (সাঃ) আগন্তুক লোকটির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বললেন আল্লাহর নবীর কলিজার টুকরা নয়নের মনি হযরত ফাতেমা (রাঃ) এবং আল্লাহ তায়ালার দুশমনের কন্যা একই বাসগৃহে কোন অবস্থাতেই বসবাস করতে পারে না। সর্বদা একথা স্মরণ রাখবে, আমার কন্যা ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা বিধায় তার যেকোন কষ্টে আমার কষ্ট ও দুঃখ লাগে । 

আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এহেন হৃদয় গ্রাহী কথা ও ঘোষণা হযরত আলীর (রাঃ) কানে পৌঁছল। হযরত আলী (রাঃ) এই দ্বিতীয় বিবাহ সম্পর্কে কোন মতই প্রদান করেন নি। তবে এ কথা সর্বজন সত্য কথা যে নবী দুলালী হযরত ফাতেমার (রাঃ) জীবিত থাকা অবস্থায় নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) দ্বিতীয় বিবাহের চিন্তাভাবনাই করেনি। কেননা হযরত আলী (রাঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর আচার আচরণে খুবই খুশী ছিলেন। 

তাই দ্বিতীয় বিবাহের চিন্তা ভাবনা কোন ক্রমেই আসতে পারে না । নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর চরিত্রের বিভিন্ন দিক
নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা করতে যেয়ে অনেকে এ ধরনের একটি কথা উপস্থাপন করেন যে, হযরত ফাতেমা সাইয়্যেদুল মুরসালীন। 

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নয়নের মনি ও কলিজার টুকরা আদরের কন্যা এবং শেরে খোদা ইসলামে বার সৈনিক হযরত আলীর (রাঃ)-এর প্রিয়তমা স্ত্রী এবং ইমাম হাসান হোসায়েনের সম্মানীয়া মাতা বলেই পৃথিবীতে তিনি এত সমাদ্রত এ প্রসিদ্ধি এবং চির শান্তিময় বেহেস্তের রমনীদের নেতা হওয়ার উল্লেখ যোগ্য কারণ এখানেই ।

প্রকৃত পক্ষে যারা এ সমস্ত মত পরিবেশন করেন তাদের এ ধারনাটি কোন ক্রমেই ঠিক না।তবে নবী কন্যা হযরত আলীর স্ত্রী ও ইমাম হাসান হোসেনের মা হতে পেরে হযরত ফাতেমা বিশ্ব নন্দিত ও ভাগ্যবতী নারী হিসেবে সবত্র সমাদৃত হয়েছেন, একথা সর্বজন স্বীকৃত। 

তবে তিনি যে উত্তম চরিত্র ও বিভিন্ন গুনাবলীতেই নারী জগতের উজ্জল নক্ষত্র ও মহিয়সী নারী হিসেবে ভুবন জোড়া সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করে ইতিহাসের পাতায় চির ভাস্বর হয়ে রয়েছে একথা দিবালোকের ন্যায় সমুজ্জল ।