হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 20

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 20

খোদার দয়ায় বিপদ মুক্তি

কোন এক বৎসরের এক ঈদের দিন। মদীনার প্রতিটি গৃহেই ঈদোৎসবের বিভিন্ন ধরণের আয়োজন চলছে। মদীনার প্রতি ঘরে ঘরে নুতন নুতন খাদ্য সামগ্রী তৈরী হচ্ছে । কেবল খাদ্য দ্রব্য তৈরীর মধ্যেই আনন্ধ চলছে তা নায় । বরং যুবক-যুবতী, ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রত্যেকেই নূতন বসন ভূষণ পরে মনের আনন্দে একগৃহ হতে অন্য গৃহে যাচ্ছে। 

এহেন আনন্দ উল্লাসের মধ্যেও মদীনার এক গৃহের মধ্যে কোন ধরনের আনন্দ ছিলনা অর্থাৎ ঈদ বলতে কোন নাম নিশান ছিলনা । কেহই সে গৃহে যেতনা যার কারণে গৃহ ছিল অতি নির্জীব, নিষ্প্রাণ। গৃহের মালিক ছিলেন ইসলামের বার সৈনিক নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ)। গৃহে ঈদোৎসবের কোন সাজসজ্জা, নতুন খাদ্য পাকান কিছুই হল না। গৃহের মালিক হযরত আলী (রাঃ) ফজরের নামায আদায়ান্তে কোথায় যে চলে গিয়েছে তা কোনই খবর নেই । 

গৃহের মধ্যে শুধু নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) হাতে আটা পিষিবার কাজ করতেছেন আর পবিত্র মুখে আল্লাহ তায়ালার নাম নিতেছে। আর ইমাম হাসান হোসোন গৃহের আঙ্গিনায় খেলা করতেছে। তারা তাদের সম বয়স্ক ছেলে মেয়েদেরকে নূতন সাজে সজ্জিত দেখতে পেল আর তাদের মনের মাঝে আনন্দ ধরছেনা। 

এক মাত্র তারা দুই ভাই পুরাতন পোশাক পরিধান করে · প্রতিদিনের মত আজও বাড়ীর আঙ্গিনায় খেলা করতেছে। হঠাৎ করে একটি বালক দৌড়ে এসে বলল হে ভাই! হাসান হোসাইন তোমাদের কি জামা নেই? যে আজ আনন্দের দিন অর্থাৎ ঈদের দিন। আমরা এ মহল্লাহর সকল ছেলে মেয়েরাই নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছি, আর তোমরা প্রতিদিনের মত আজও পুরাতন কাপড় পরিধান করে খেলা করতেছে এর কারণ কি? 

তোমার আব্বা আম্মা তোমাদের জন্য বাজার হতে নতুন জামা ক্রয় করেনি। ক্ষুদ্র বালক ইমাম হাসান ও হোসাইনের এখন ও এতসব বুঝের উঠার বয়স হয়নি। যার কারণেই তারা তাদের পিতা-মাতার অবস্থা সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখত না। সত্যি ইমাম হাসান ও হোসাইন সমবয়সী ছেলে মেয়েদের কথা অনুযায়ী গৃহে ফিরে মাকে জড়ায়ে ধরে চুমু খেয়ে বলেন মা, আজতো ঈদের দিন। আমাদের বন্ধু বান্দব সকলেই নুতন জামা পরিধান করে আনন্দ করতেছে। 

আর আমরা তো এখন পর্যন্ত নুতন কাপড় পরিধান করি নেই, আমাদের নুতন কাপড় কোথায়? মাতা পুত্রদের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু ভাবতেছে আর মনে মনে বলছে সত্যি। তারা যা বলেছে তা তো মিথ্যা কিছুই না। পাড়া পড়শীর সকল ছেলে মেয়েরা নুতন জামা কাপড় পড়েছে ওদেরও তো পড়তে মন চায় এটা স্বাভাবিক। 

তারপরও ফাতেমা (রাঃ) মনকে শান্ত্বনা দিয়ে বলছে আল্লাহ তায়ালা যখন যেভাবে রাখে তার উপরই খুশী থাকতে হবে। শেষ পর্যন্ত কোন কিছু উপায়ন্ত না দেখে অবশেষে বললেন বাবা এখন পর্যন্ত তোমাদের জামা তৈরী হয়নি। তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই তোমাদের জামা পাবে। তোমাদের চাইতে হবেনা। মায়ের কথার পরে পুত্ররা বললেন মা কখন আর তৈরী হবে? আজ ঈদের দিন। 

সকলে নুতন জামা কাপড় পরিধান করতেছে আর আমরা এখন ও নুতন জামা পাইতেছিনা। ছেলেদের কবল হতে ফাতেমা (রাঃ) কোন ভাবেই রেহাই না পেয়ে বললেন বাব বাহির হতে একটু খেলা ধূলা করে আস তার পরই তোমরা তোমাদের নুতন জামা কাপড় পাবে। ইমাম হাসান হোসাইন খেলতে যাওয়ার পরই মধ্য দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) রুটি বানাতে বসলেন। যেহেতু নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-এর বাহির থেকে আসার সময় হয়েছে। 

নবী কন্যা হাতে রুটি বানাইতেছেন আর মনে মনে ভাবতেছেন ছেলেরা বাহির হতে খেলাধুলা করে এসেই তো নুতন জামার বায়না ধরে বসবে, তখন ওদের কি বলে শান্ত্বনা দিব যাতে ওরা খুশি হয়। এহেন চিন্তা ভাবনা করতেছে এমনি সময় হঠাৎ করে ছেলেরা বাড়ি হতে গৃহে ফিরলেন। গৃহে ফিরেই বললেন মা, তাড়াতাড়ি আমাদের নুতন জামা কাপড় দিয়ে দাও। 

মা উপায়ন্ত কোন কিছু না দেখে পুত্রদ্বয়কে শান্তনা দিবার মানুষে বললেন তোমাদের জামা এখনও তৈরি হয়নি। তোমরা গোসল দিয়ে আস। সত্যি, আদরের ইমাম হাসান হুসাইন মনে মনে ভাবলেন গোসল দেয়ার ফাঁকে তাদের জামা অবশ্যই তৈরী হয়ে যাবে। যার কারণে মনের খুশীতেই ইমাম হাসান ও হুসাইন গোসল করতেছে। 

এদিকে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মনের চিন্তা ভাবনা আরও বেড়ে গেল, মনে মনে ভাবতেছেন এবারে কিবলে পুত্রদের শান্তনা দিব? এভাবে কতবার আর ফাকী দেওয়া যায়? এবারে গোসল করে নুতন জামা না পেলে ওরা কেঁদে কেঁটে আকুল হয়ে পড়বে। 

এসব চিন্তা ভাবনা করে হযরত ফাতেমা (রাঃ) অস্থির হয়ে পড়লেন ইমাম হাসান হুসাইনের গৃহে ফিরার সময় হয়েছে মনে করে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে অজু করে এস জায়নামাজে বসে গেলেন, এবং রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার দরবারে দুহাত তুলে মনের চাপা দুঃখকে বললেন- হে আমার প্রভু, তুমি আমার সৃষ্টিকর্তা। 

তুমি আমার সকল সমাদান কারী বিধায় তুমি তোমার এই অধম দাসীর উপায় করে দাও। জেহাদের ময়দানে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আরব ভূ-খণ্ডের দুর্ধর্ষ বীর যাতে নরনারী নির্বিশেষ অস্বারোহন তীর নিক্ষেপ ইত্যাদি যুদ্ধ বিদ্যায় তাদের বিশেষ জ্ঞান ছিল । 

যে পর্যন্ত ইসলামের পর্দা প্রথা প্রবর্তিত হয়েনি ততদিন পর্যন্ত ঈমানে দীপ্ত দীপ্তিয় মান মসলমান রমণীগণ যুদ্ধ করার অধীর আগ্রহে জেহাদের ময়দানে যেত। তবে রমণীদের জন্য নিদ্ধারিত কোন যুদ্ধের স্থান ছিলনা তারাও পুরুষের পাশাপাশি যুদ্ধের ময়দানে দন্ডায় মান হয়ে সমভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। 

তারা অনেক সময় পুরুষ যোদ্ধাদের সেবা শত্রুষা ও আহত সৈনিকদের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে এখানে উল্লেখ্য বিষয় হল ঐ
সময় মুসলীম রমণীদের যুদ্ধ ক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ করা উচিত ছিল কেননা ঐ সময় ধর্ম যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যগণ তুলনায় বিপক্ষ সৈন্য বাহিনী হতে এতই নগন্য ছিল যে তাদের মুসলিম নারীদের সাহায্য সহযোগিতা অতীব প্রয়োজন ছিল। 

এ দিক হতে মুসলিম রমণীদের যুদ্ধক্ষেত্রে গমণ করাও শ্রেষ্ঠ ইবাদতের মধ্যে গণ্য হত। নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) এই দিক থেকে কোন নারীর পশ্চাতে ছিলেন না। ইতিহাস পাঠে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে যে ঐতিহাসিক ওহুদের যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম সৈন্য কাফেলা যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, বহু সংখ্যক বীর মুজাহিদ হতাহত হয়ে গেলেন, কেবল বীর মুজাহিদ হতাহত হলেন তা নয় । 

বরং নিখিল বিশ্বের ত্রানকর্তা সুপরিশীর কাণ্ডালী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে মাঠে পড়ে রইলেন। ঐ মুহূর্তে নারী কুলের শিরমনি হযরত ফাতেমা (রাঃ) বেশ কিছু মুসলিম রমনী নিয়ে যুদ্ধে গমণ করে আহত মুসলিম সৈন্যদের সেবায় নিয়োজিত হলেন। 

নবী দুলালী হযরত কাতেমা (রাঃ) যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হয়ে সংজ্ঞাহীন পিতা বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পবিত্র মস্তক মোবারক নিজের কোলে তুলে নিয়ে তার পবিত্র চেহারার রক্ত নিজ হাতে ধৌত করে দিলেন এবং আহত স্থান নিজেরই বেঁধে দিলেন। 

এছাড়া তিনি যুদ্ধের ময়দানে আহত মুসলিম সৈন্যদেরকে হযরত আলীকে (রাঃ) নিয়ে সেবা শুশ্রূষা করেছিলেন। এমনি বহু বর্ণানায় দেখা যায় নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) প্রয়োজনে অনেক সময়ই যুদ্ধের ময়দানে যেতেন ।