হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 19


হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 19

ঐতিহাসিক এক ঘটনার মধ্যদিয়ে যা নিম্নে প্রদত্ত হল

কোন এ সময় নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর গৃহে খাবার মত কিছুই ছিলনা। সেদিন गর আলী (রাঃ) অনেক চেষ্টা করেও কোন কাজের সন্ধান হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী মিলাতে পারেনি। সন্ধ্যার সময় মলিন মুখে গৃহে ফিরে আসলেন। 

হযরত আলী ফাতেমা (রাঃ)-কে কিছু না বললেও ফাতেমা বুঝতে বাকী রইলনা, যার কারণেই ফাতেমা (রাঃ) বললেন হে আলী, তোমার মলিন মুখ দেখে আমি সহ্য করতে পারতেছিনা, তুমি কাজ মিলাতে পারনি বলে মনে দুঃখ নিওনা। আমি কষ্ট করতে সম্মতি আছি। 

যেহুেতু সুখ দুঃখ আল্লাহর পক্ষ হতেই হয়। হযরত ফাতেমা (রাঃ) বললেন হে আলী এভাবে কাজের জন্য না ঘুরে তার চেয়ে ছোট খাট একটা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারলে অবশ্যই ভালই হত। নবী দুলালী হযরত ফাতেমার (রাঃ) কথা শুনে বললেন আমারতো এ রকম কোন একটি মনোভাব ছিল।

মুল ধনতো নেই । মুলধনের ব্যবস্থা করতে পারছিনা বলেই এ রকম প্রত্যহ মজুরী করার জন্য ঘুরে বেড়াতে হয়। হযরত আলীর (রাঃ) হৃদয় গ্রাহী কথা শুনে নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) বললেন- আমার এক দুলাভাই আছে যার নাম হল ওসমান সে একজন বিরাট ধনী মানুষ। তার কাছে কিছু টাকা মুলধন হিসেবে চেয়ে দেখতে পারেন? যদি কিছু টাকার ব্যবস্থ করতে পারেন তাহলে যে কোন একটা ব্যবসা শুরু করে দিন। 

সত্যি। নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কথায় হযরত আলী (রাঃ) এ সম্মতি হলেন। যাই হোক হযরত ফাতোম (রাঃ)-এর কথা অনুযায়ী পরের দিন সকালে উঠেই হযরত ওসমান গণির বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলেন। কিছু পথ অতিক্রম করার পরই তিনি দেখতে পেলেন একজন অপরিচিত ব্যক্তি একটা উট নিয়ে রাস্তার পাশ্বে দণ্ডায়মান আছেন। 

লোকটি হযরত আলী (রাঃ)-কে দেখা মাত্রই বলে ফেললেন ভাই আপনি কি এই উটাট খরিদ করবেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন মনের একান্ত ইচ্ছা থাকলেও উটকিনার মত অর্থ আমার নেই। তখন লোকটি বললেন আমাকে আপনি না চিনলেও আপনাকে আমি অবশ্যই চিনেছি। আপনি হলেন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জামাতা শেরে খোদা হযরত আলী। 

আপনি যদি ১০০ টাকার বিনিময় এই উটটি কেনার আশা করেন তাহলে আমি আপনাকে বাকীতে দিয়ে দিব। আপনি আপনার সুযোগ মত বিক্রয় করে আমার প্রাপ্য একশত টাকা আমাকে দিয়ে দিবেন। ঠিকই লোকটির কথা মত হযরত আলী একশত টাকা মূল্যে ঠিক করে বাকীতে উটটা গ্রহণ করে বাড়ীর দাকে চলে গেলেন । 

কিছু দুর পথ চলতে না চলতেই এক ব্যক্তির সাথে তার দেখা হল, যে বললেন হে ভাই আলী। আপনার এ উটটা আমার কাছে বিক্রয় করবেন কি? তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন হ্যাঁ আমি উটটি বিক্রয় করব। এ কথা বলার পরই হযরত আলী (রাঃ) সেই লোকটির নিকট দেড়শত টাকা মূল্যের বিনিময় উটটি বিক্রয় করে দিলেন। লোকটি উট নিয়ে চলে গেলেন আর হযরত আলী মনের খুশীতে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলেন। 

এমনি সময় হঠাৎ করে প্রথম ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে (যে ব্যক্তি বাকীতে উট বিক্রয় করে ছিলেন) বললেন হে ভাই আলী, আপনি কি আপনার উট বিক্রয় করেছেন? তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন হ্যাঁ ভাই, উটটি আমি দেড়শত টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেছি। 

হযরত আলীর (রাঃ) কথা শুনা মাত্রই লোকটি বললেন আমার প্রাপ্য একশত টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে লাভের অবশিষ্ট টাকা নিয়ে হযরত আলী বাড়ী ফিরলেন কিছু পথ অতিক্রম করারপরই পথিমধ্যে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সাথে হযরত আলীর (রাঃ) দেখা হল। হযরত আলীর (রাঃ) শশুর আব্বা প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সাথে হযরত আলীর (রাঃ) সাক্ষাৎ হল। 

হযরত আলী (রাঃ) শশুর আব্বা প্রিয় নবী (সাঃ)-এর কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। নবী জামাতা হযরত আলী *(রাঃ)-এর মুখের কথা শুনে প্রিয় নবী (সাঃ) বললেন হে আলী! তুমি কি চিনতে পেরেছ এই দুই ব্যক্তি কে? তোমার নিকটে প্রথমে যে ব্যক্তি উট বিক্রয় করে ছিলেন এবং পরে যে ব্যক্তি তোমার নিকট হতে উট ক্রয় করে ছিলেন। জবাবে হযরত আলী (রাঃ) বললেন হুজুর আমি কাউকেই চিনতে পানতে পারিনি। 

হযরত আলীর কথা শুনে প্রিয় নবী (সাঃ) বললেন তোমার কাছে যে উট বিক্রয় করেছে সে হলেন হযরত মিকাইল (আঃ) আর উট ক্রেতা হলেন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এই দুই জন ফেরেশতাই রমণী কুলের শিরমনি আমার কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মনের আশা পূর্ণ করার জন্যে বিশ্ব প্রভু আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তোমার কাছে উট বেচাকেনা করতে হাজীর হয়েছিলেন। 

যাই হোক এখন তুমি তোমার লাভের টাকা দিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতে থাক। প্রিয় নবী (সাঃ)-এর মুখের কথা শুনে হযরত আলী (রাঃ) খুবই খুশী হলেন যা বলে শেষ করা যাবেনা। মনের খুশীতে হযরত আলী (রাঃ) গৃহে ফিরলেন। 

বাড়ি ফিরে সকল ঘটনা ফাতেমা (রাঃ)-কে খুলে বলে বললেন হে ফাতেমা, আমি আজ হতে তোমার মনের ইচ্ছানুযায়ী ব্যবসায় হাত দিলাম, সর্বপ্রথমই আমার কেনা বেচা হল হযরত মিকাইল ও হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-এর সাথে। অবশ্য হযরত মিকাইল ও হযরত জিব্রাইল (আঃ)-এর সাথে কেনা বেচা শুরু হওয়ায় হযরত ফাতেমা (রাঃ) খুবই খুশী হলেন। 

এবং বিশ্ব প্রভু আল্লাহ তায়ালার দরবারে অগনিত শুকরিয়া আদায় করে ব্যবসার মঙ্গলের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করলেন। প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ তায়ালার প্রিয়জন হতে পারলে আল্লাহ তায়ালা কিভাবে বান্দাহকে সাহায্য
করেন। যে সাহায্যের কথা সে কোনদিন কল্পনাও করে না। 

যেমনি ঘটেছিল নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-এর উট বেচা কেনার মধ্যে দিয়ে। অন্য আর এক দিনের ঘটনা একদা রাতে নবী কন্যা আদরের দুলালী হযরত আলী (রাঃ) পিতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষ্যাৎ করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে গৃহ হতে বের হয়ে দেখতে পেলেন বাড়ীর প্রবেশ পথেই একটি উট দাড়িয়ে আছে। 

নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে দেখামাত্রই উটটি মানুষের জবানে স্পষ্ট ভাষায় বললো হে নবী কন্যা, আমার সালাম, গ্রহণ করুন। আপনার খেদমতের জন্যই আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি। আপনর সাথে আমি ও প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সাথে দেখা করতে যাব। অনুগ্রহ করে আপনি আমার পিঠে উঠে বসুন আপনাকে আমি প্রিয় নবী (সাঃ)-এর কাছে নিয়ে যাব। 

সত্যি, নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) উটটির কথা শুনা মাত্রই অবাক হয়ে গেলেন, আর অবাক হবার কথাও। যাই হকো তিনি উটের পিঠে আরোহণ করে রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করে বললেন । হে আমার প্রভু। তুমি সারা জাহানের মালিক, তোমার মহিমার অন্তনেই, তুমি তোমার অধম দাসীর প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ এ জন্য লাখ লাখ শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছি। চিরদিন তুমি তোমর এ দাসীর প্রতি সন্তুষ্ট থেকো ।