হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 18

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 18

নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইবাদত বন্দেগী

নারী স্কুলের শিরমনি বাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর গোটা জীবনের ইবাদত বন্দেগীর যে দৃশ্য আমরা অবলোকন করি প্রকৃত মুসলিম নারীর দুনিয়ার জীবনে তাই হল আদর্শ। 

দুনিয়ার জীবনে এক জন মুসলিম নারীর উচিত আল্লাহ তারাপার রেজামদি হাবীলের নিমিত্তে পিতা মাতা স্বামী এবং পুত্র 'কন্যাদের সাথে সৎ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীর বাধার্থ দায়িত্ব কর্তব্য পাপন করে আল্লাহ তায়ালা র ইবাদত বন্দেগী করা এবং অন্যকে ইবাদত বন্দেগী করার জন্য সৎ উপদেশ দিয়ে ভজন্য উদ্বুদ্ধ করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি। 

আর আল্লাহ তায়ালার নিকট এই রকম ইবাদত বন্দেগীই গ্রহনীয়। কিন্তু যারা দুনিয়ার সংসার জীবন পরিত্যাগ করে দিবা রাত আল্লাহ তারাপার ধ্যানে ডুবে থাকে তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে আল্লাহর কাছে জবাব দিত করতে হবে কেনান রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায় এরূপ নয় যে দুনিয়ার সংসার জীবনের সিদ্ধ ব্যাপার পরিত্যাগ করে কেবল তার ধ্যানে ডুবে থাকুক। কেননা 

এ ধরনের মানুষের দুনিয়ার সংসার বিবাহ শাদী কোন কিছুরই দরকার হয়না। তারা কেবল তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই আল্লাহর ধ্যানে ডুবে থাকে। তবে এ ধরণের মানুষের পেরণ রাখা উচিত দুনিয়ার সংসার জীবন পরিত্যাগ করে কেবল আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে মগ্ন থাকার মধ্যে বিশ্ব বহু আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবার সম্ভাবনা থাকে। 

এছাড়া মায়া মমতার দুনিয়ার সংসারের মাত্রা মমতার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীকে পরীক্ষার মাধ্যমে বাচাই করার পথ একে বারে বন্ধ হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য বিষয় হল দুনিয়ার সংসার জীবনের সুখ শান্তির মধ্যে থেকে ইবাদত বন্দেগী তথা আল্লাহ তায়ালা সমস্ত হুকুম পালন করাই হল সত্যিকার মুমিনের পরিচয়। 

কেননা যার দুনিয়ার জীবনে পিতা মাতা ভাই-বোন, প্রভৃতি কিছু নেই সে তো বামেলা মুক্ত বিধায় ঐ ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকা যতদূর সহজ আর একজন সংসারী লোকের পক্ষে তত সহজভাবে ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন হওয়া সম্ভব নয়। কেননা বারের সকলের দায় দায়িত্ব পালন করে তার পরে ইবাদত পরে মধ্যে মগ্ন হতে হয়। তবে এখানে মনে রাখার বিষয় হল মুমিন লোকের জন্য সামরিক কাজ কর্ম ও দায়িত্ব পালন ও ইবাদতের মধ্যে পণ্য। 

যার কারণেই যারা দুনিয়ার সংসার জীবনের কঠিণ কার্য সাধন করে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকে তাদের মর্যাদ আল্লাহ তায়ালার নিকট অনেক বেশী। ইসলাম বৈরাগ্যতা পছন্দ করে না। বিধায় একথা সর্বদা মনে রাখতে হবে যে দুনিয়া হল আখেরাতের ক্ষেত স্বরূপ তাই দুনিয়ার সংসার জীবনকে বিসর্জন দিয়ে দিবা রাত আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা প্রকৃত মুমিনরে পরিচয় নয়। 

প্রিয় নবীর কলিজার টুকরা দুনিয়ার সংসার ধর্মীনারীদেরে আদর্শের প্রতীক হযরত ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন এই শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ তাপম্বী। তিনি অভাব অনাটনের সংসারের জীবন যাপন করে এবং নবী কন্যা হিসেবে সকলের দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে ও নিরলস ও একাগ্রচিত্তে বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে ডুবে থাকতেন। 

কিন্তু দুনিয়ার সংসার জীবনের কোন সমস্যাই তাকে এক মুহুর্তের জন্যও আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগী হতে দূরে রাখতে পারেনি। বরং তিনি সংসার জীবনের প্রতিটি কাজ কর্মই আল্লাহ তায়ালার হুকুম ও ইবাদত হিসেবে পাললন করতেন। সাংসারিক জীবনের সকল কাজ কর্মের মধ্যেই দেখা গেছে দৈহিক অঙ্গ প্রতঙ্গ সংসারের কাজে নিযুক্ত করেছেন। 

অন্য দিকে তার রসনা এবং অন্তর রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ চর্চায় রত রয়েছেন। এমন কি যাতায় আটা পিষিতছেন, উনুনে রুটি সেকিতেছেন, এমনি মুহুর্তেও মুখে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র নাম নিতেছে। কিন্তু সংসারের সকল কাজ কর্ম শেষ করে সন্তান দিগকে ঘুমায়ে যখন সম্পূর্ণ অবসর হতেন তখন ঘন্টার পর ঘন্টা নফল নামায ও কুরআন শরীফ তেলাওয়াতের মধ্যে কাটিয়ে দিতেন। 

কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় রাতে স্বামী সন্তান নিদ্রার কোলে ঢলে পড়লে সে সকলের অজান্তে বিছানা হতে উঠে পাক পবিত্র হয়ে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে রত হয়ে যেতেন। তিনি যখন নামাযে দাড়াতেন তখন মনে হত যে তার দুনিয়ার প্রতি কোন খেয়াল নেই ।

নামায আদায়ের পরে মহান করুনার আধার আল্লাহ জাল্লাহ শানুহুর দরবারে দুহাত তুলে প্রার্থনা করে এমনভাবে গোনাহের জন্য ক্রন্দন করতেন মনে হত যেন সে এ পৃথিবীর মধ্যে বড় পাপী ও গোনাগার। মোনাজাত করার সময় এমনভাবে ক্রন্দন করতেন তার দু চোখের পানিতে বসনাদি পর্যন্ত সিক্ত হয়ে যেত। তবে আশ্চার্যের বিষয় হল এহেন আবেগ জড়া প্রার্থনা করার সময় ও কোন দিনই কিছু কামনা করেননি। 

বরং তিনি গোনাহের ক্ষমা চেয়ে নিজেদের ও অন্যদের পরলৌকিক মঙ্গল প্রার্থনা করেছেন। সপ্তাহের দু'এক দিন ছাড়া প্রতি দিনই রোজা রাখতেন তাও আবার সন্ধ্যায় পানি দ্বারা ইফতার করে পরের দিনে রোযার নিয়ত করতেন। প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু চিন্তু করে দেখুন নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) কত কষ্ট করে আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাসিলের নিমিত্তে ইবাদত বন্দেগী করেছেন। 

তবে কেবল যে দিবা-রাত আল্লহর ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন তাও নয় দুনিয়ার সকল কাজ কর্ম সুষ্ঠভাবে চালিয়ে যেতেন তবে দুনিয়ার কাজ কর্ম করার সময় ও মুখে আল্লাহর নাম জপতে থাকতো। আর প্রকৃত মুমিনের পরিচয়ই হল তা যে সে দুনিয়ার কাজ কর্ম করার সময় ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ কর্ম সমাধান করেই আবার ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে মগ্ন হয়ে যেতেন ।

কোন এক সময় নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর নিকট কতিপয় রমণী কিছু নসীহতের উদ্দেশ্যে আগমন করেছিলেন। তখন তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। হে ভগ্নীগণ! আমার পিতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কাউকে যদি সিজদা করার বিধান থাকত তাহলে আমি নিশ্চয়ই স্ত্রী লোকদের প্রতি তাদের স্বামীগণকে সিজদাহ করবার নির্দেশ দিতাম। 

এখন একটু চিন্তা করে দেখুন নারীদের কাছে স্বামী কত অধিক মর্যাদার পাত্র এবং সেই সম্মানীয় স্বামীদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করা উচিত। একথা বলার সাথে সাথে নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) তাদের কাছে একটি কাহিনী বলতে শুরু করলেন কোন এক সময় আমি আমার আব্বাজানের কাছে বসেছিলাম এমনি সময় হঠাৎ আমি দেখতে পেলাম জনৈকা দাসী হঠাৎ আব্বাজানের কাছে আদরের সাথে বলতে লাগলেন হুজুর । 

আমার সওদাগর মুনিব বিদেশে যাবার সময় তার পত্নীকে বলে গিয়েছেন যে তিনি কোন সময় যেন দোতালা হতে নিম্নে না আসেন কিন্তু তারা যেই বাড়ীতে বসবাস করেন সেই বাড়িতে নিচতলায় উক্ত মুনিব পত্নীর বৃদ্ধা মা বাবাও বসবাস করেন। কিন্তু এখন তার পিতা মাতা উভয়ই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে কিন্তু তাদের দেখা শুনা ও সেবা যত্ন করার মত এক মাত্র কন্যাই রয়েছে। 

কিন্তু সেই কন্যা তো স্বামীর নির্দেশে আবদ্ধ অর্থাৎ স্বামীর হুকুম ছাড়া সে নীচতলায় আসতে পারে না। এই মুহুর্তে আপনি যদি নির্দেশ দিতেন, তাহলে তিনি নেমে এসে রোগাক্রান্ত পিতা মাতার খেদমত করতে পারতেন । প্রিয় নবী (সাঃ) জনৈকা দাসীর কথা শুনে বললেন না, তাকে আমি তেমন আদেশ করতে পারব না। 

কেন না তার জন্য স্বামীর হুকুম পালন করা অবশ্যই কর্তব্য এহেন কথা শুনা মাত্রই দাসী চলে গেলেন। চলে যাবার দু'এক দিন পরেই দাসী আবার ফিরে এসে বললেন হযরত। আমার মুনিব পত্নীর অন্তিম সময় উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু তার বিশেষ কথা হল তার শেষ সময় তিনি তার কন্যাকে একটু দেখে যেতে চায়। এ মুহূর্তে আপনি যদি অনুমতি দান করতেন তা হলে মুমূর্ষ বৃদ্ধের মনের একান্ত বাসনাটি পূর্ণ হত। 

এই বারও প্রিয় নবী (সাঃ) সেই পূর্বোক্ত জবাব দান করলেন। প্রিয় নবী (সাঃ)-এর কথা শুনে দাসী চলে গেলেন কিন্তু একটু পরেই ফিরে এসে বলল হে নবী। এই মাত্র বৃদ্ধ লোকটি মৃত্যুবরণ করেছে। তার ভাগ্যে কন্যা দেখা হল না। তবে বৃদ্ধা লোকটির অবস্থাও তেমন ভাল না। এই মুহূর্তে আপনি হুকুম করলে হয়তো বৃদ্ধা মাতার আদরের কন্যাকে দেখে বিদায়ের মুহূর্তে প্রাণে একটু শান্তি পেত । 

আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই বারও সেই একই জবাব দিলেন। এবার দাসী প্রিয় নবী (সাঃ)-এর কথা শুনে চলে গেলেন। কিছু সময় যেতে না যেতেই বৃদ্ধা লোকটি দুনিয়া হতে বিদায় নিলেন। এই ঘটনার কিছু দিন পরেই স্ত্রী লোকটির স্বামী গৃহে ফিরে সকল ঘটনা শুনলেন। তবে উক্ত ঘটনা মুনে শুনে খুবই দুঃখ নিয়ে বললেন এহন অবস্থার সময় তোমাকে নীচে নামতে বারণ করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। 

আসলে তুমি ভুলেই করেছ। স্বামীর এহেন কথা শুনে স্ত্রী লোকটি বললেন দেখুন আমি কোন ভুল করেনি বরং আমিই ঠিক করেছি, কেননা এর ফলে কি ঘটেছে শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আমি একাধারে তিন রাত পর্যন্ত সপ্নে দেখিছি আমার পিতা মাতা উভয়েই চির শান্তিময় বেহেশতের মধ্যে বিরাট অট্টালিকার অভ্যন্তরে বসবাস করেছেন এবং তাদের খেদমতের জন্য অসংখ্য দাসদাসী মোতায়েন রয়েছে। 

তাদের সেখানে আরাম আয়েশ সুখ শান্তির অভাব নেই তাদের সুখ শান্তি দেখে আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কোন পূন্যের ফলে এরূপ প্রতিদান লাভ করেছেন। একথার জবাবে তারা বললেন উহা আমাদের কোন পূন্য ফল নহে, বরং “মা” তোমার পূন্যেই আমরা ইহা প্রাপ্ত হয়েছি। নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর পবিত্র মুখের কথা শুনে উপস্থিত রমণীগণ বিস্মিত হয়ে মনের খুশীতে সেখান হতে বিদায় নিলেন। 

তারা প্রায়ই নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর নিকট এসে বিভিন্ন সময় উপদেশ ও শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করতেন। আদর্শের প্রতীক নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) সাংসারিক জীবনে দৈনন্দিন ঘর কন্যার যে সমস্ত কাজ করতেন তার প্রত্যেকটি কাজ ও কথার মধ্যে সততা, খোদাভীরুতা, এখলাস নিহিত থাকত। কেবল গৃহের কাজ কর্মের মধ্যেই এ মহৎ গুণগুলো নিহীত ছিল তা নয়। 

এমন কি তার শিশু সন্তানদের সাথে দৈনন্দিন যেসকল কথা-বার্তা বলতেন তার মধ্যেও আল্লা রাসূলের অসন্তুষ্টি মূলক আদর্শ নিহীত ছিল। আমাদের বর্তমান সমাজে দেখা যায় অনেক পিতা মাতাই সন্তানদের আদর করতে যেয়ে তাদের খুশী করার লক্ষ্যে অনেক অসত্য ঘটনা ও কথা বলেন। কিন্তু নবীজির কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কোন রূপ অসত্য বানোয়াটি কথা বলে সন্তাদের মন খুশী করত না। 

বরং তাদের কে কবরের ভয়াবহ আযাব ও হাশরের ময়দানের হিসাব নিকাশ ও মৃত্যুর কষ্ট প্রভৃতি সত্য কথা বলে ভয় দেখিয়েছেন। আর চির শাস্তিময় বেহেশতের সুখ শান্তি আরাম আয়েশ বেহেশতের হুর গেলমান ফল ও ফুল ইত্যাদির কথা বলে চির শান্তিময় বেহেশতের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন। প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু চিন্তা করে দেখুন বর্তমান যুগের আধুনিক পিতা মাতার মত অসত্য বানোয়াট কথা বলে সন্তানদের মনে আনন্দ দিতেন না। 

তবে তার বর্ণনা কৃত ঘটনা ও কথা ছিল সত্য। নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) সত্য কথা বলার সাধ্য সেই যে সন্তানদের হৃদয়ে আনন্দ ও ভয় দিতেন তা একটি ঘটনার মাধ্যমে বর্ণনা করে দেখান হল যা নিম্নে প্রদত্ত হল। ইমাম হাসান এবং ইমাম হোসায়েন (রাঃ) উভয়েই শৈশবকালে কোন এক সময় তারা বাহির হতে ঝগড়া করে ঘরে এসে মায়ের কাছে উভয় উভয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে কিন্তু তাদের অভিযোগ শুনে বুঝা যেতনা কে দোষী আর কে নির্দোষী। 

তবে মাতা উভয়ের কথাই কান পেতে শুনতেছে যেহেতু তার কাছে দুটি সন্তানই সমান আদর ও সমান স্নেহের অধিকারী। কেহই নিজের দোষ স্বীকার করতেছেন। নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) মহা সমস্যায় পড়ে গেলেন যাই হোক সঙ্গে সঙ্গেই তিনি উপায় স্থির করে আদরের পুত্রদেরকে বললেন দেখ। 

বাবা তোমরা কে দোষী আর কে নির্দোষী তা বিবেচনা করার আগে তোমাদের কিছু কথা বলব তা তোমরা মনো যোগ দিয়ে শ্রবণ করবে। বিশ্ব প্রভু আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন তোমরা উভয়ে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করে মহা অন্যায় করেছ একথা সত্য । তোমাদের এহেন অন্যায়ের জন্য আল্লাহ তায়ালা যদি তোমাদের কে রোজ কিয়ামতে জিজ্ঞানা করেন। 

তখন তোমরা কে কি জবাব প্রদান করবে বলতো? মনে রেখ সেই কঠিন কেয়ামতের দিন যদি তোমরা লা জাবাব হয়ে যাও, তাহলে রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালা কঠিন শাস্তি দান করবে। নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কথা শুনে ইমাম দ্বয়ের মনে ভয় জেগে গেল। শুধু ভয় নয় তারা তাদের মায়ের কাছে করুন কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন মা, তাহলে এই ভয় হতে রক্ষা পাওয়ার কি পন্থা আছে তা আমাদের বলুন। 

তখন হযরত ফাতেমা (রাঃ) বললেন বাবারা তোমাদের ভয়ের কারণ নেই, কেননা রাহমানুর রাহীম। আল্লাহ তায়ালা আবার বলেছেন কেহ যদি কোন ঘটনা চক্রে অন্যায় করে এবং এ ধরণের অন্যায় আর করবেনা বলে খালেস দিলে তাওবা করে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। 

মায়ের এহেন সত্য উপদেশমূলক কথা শুনে হামাম ভ্রাতাদ্বয় তাদের আম্মাকে বললেন মা আমরা এহেন কাজ আর কোন দিন করবনা বলে খালেস তাওবা করব। তবে আপনি আমাদেরকে বলেদিন কিভাবে তাওবা করতে হয়? তখন মা ফাতিমা (রাঃ) বললেন বাবা চল, আমরা প্রথমে ওযু করে পাক পবিত্র হয়ে আসি । সিত্য, মা ফাতেমা (রাঃ) আদরের ছেলেদের নিয়ে ওজু করে এসে জায়নামাযে বসে গেলেন । 

জায়নামাযে বসে খালেস দিলে তাওবা করলেন, হে আল্লাহ, আমরা আর কোন দিন এ ধরণের অন্যায় কাজ করবনা আপনি আমাদের কে ক্ষমা করে দিন। তারপরে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দুহাত তুলে ক্ষমা চেয়ে ক্রন্দন করলেন । ইমাম হাসান হোসাইন (রাঃ) আদর্শের প্রতীক আবেদা পুণ্য শীলা মায়ের কাছ হতেই ন্যায়ের মূল্য অন্যায়ে দোষ এবং মহান করুনার আধার আল্লাহ জাল্লাহ শানুহুর নিকট মুক্তি লাভের পথ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করলেন । 

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটুভেবে দেখুন নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কত হেকমতের মধ্যে দিয়ে পুত্রদের চরিত্র পরিশুদ্ধ করেছেন উক্ত ঘটনার মধ্যেমেই আমরা বুঝতে পারি যে হযরত ফাতেমা (রাঃ) তার ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে জীবনের প্রতিটি পদে পদে কিভাবে পরহেজগারী অবলম্বন করেছিলেন। 

তাই আসুন আমরা আমাদের মা বোনদেরকে মা ফাতেমার আদর্শে অনুপ্রাণিত করে তার আদর্শে জীবন গঠন করার প্রতি আহবান জানাই। তাহলেই মনে করব নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী লিখা সার্থক ও সফল হয়েছে।
অন্য আর একটি ঘটনার মাধ্যমে আমরা প্রমান করি যে হযরত ফাতেমা (রাঃ) জীবনের প্রতিটি পদে পদে কিভাবে খোদা ভীতি অবলম্বন করেছিলেন। 

কোন এক সময় মক্কার পৌত্তলিক কুরাইশ রমণীগণ তাদের কোন এক ভোজ সভায় নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে নিমন্ত্রণ করল । তবে মা ফাতেমা (রাঃ)-এর এধরণের ভোজ সভায় উপস্থিত হতে মনের দিক হতে মোটেই ইচ্ছা ছিলনা। যাই হোক তবুও প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নির্দেশ ক্রমে তিনি সংগত ও শোভনীয় পরিচ্ছদে দেহাবৃত করে নবী কন্যা হিসেবে মার্জিত হয়ে ভোজ সভয় উপস্থিত হলেন। 

ভোজ সভায় উপস্থিত হয়ে নবী কন্যা দেখলেন প্রত্যেক রমণীরাই মূল্যবান বেশ ভুষায় সজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠানে দর্শনীয় বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) উপস্থিত রমণীদের নব নব সাজে সজ্জিত বেশ ভুষার চাককিক্যের অবজ্ঞা করে বললেন হে রমণীগণ, এসব সাজসজ্জা সবই ক্ষণস্থায়ী। আস আমি তোমাদেরকে পরকালীন স্থায়ী সুখ সম্পর্কে কিছু বলি । 

এহেন কথা বলেই নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) আল্লহ তায়ালার একত্ববাদের কথা বর্ণনা করে পর লৌকিক স্থায়ী সুখ সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে বর্ণনা করলেন। তার মূল্যবান উপদেশ শ্রবণ করে তাদের পৌত্তলিকতার অসারতা অনুধাবন করতে পারল এবং আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ইসলামের মাহাত্ম মর্যাদা উপলব্দি করে ঐ মুহূর্তে অনেকেই ইসলামের অমীয় সুধা গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়। 

যাই হোক প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) শত ব্যস্ততা ও কার্যের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীতে কোন সময়ই শৈথিল্য প্রকাশ করেননি। বরং সাংসারিক কাজ করে সময় পেলেই জায়নামাযে দাড়িয়ে যেতেন, নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) বলেন- নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) অভাব অনাটন সাংসারের মধ্যে জীবন যাপন করেও ইবাদত বন্দেগীতে কঠোর সাধনা করেছেন । 

সারা দিনের সাংসারিক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করার পরে স্বামী সন্তান বা যখন নিদ্রার কোলে ঢলে পড়তো পৃথিবী যখন নিরব নিস্তদ্ধ শান্ত হয়ে যেত কোথাও পশু পাখির শব্দ নেই এমনি মুহূর্তে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) আমার অজানে, আমর পাশ্ব হতে উঠে গিয়ে পাক পবিত্র হয়ে হাজির হতেন রাহমানুর রাহীম আল্লহ তায়ালার দরবারে সকলের অজান্তে নীরবে আল্লাহ তায়ালার জিকির করতেন সমস্ত রাত, কেবলই জিকিরই করতেন না। 

তার পিতা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর গোনাহগার উম্মাতের জন্য ক্ষমা চেয়ে দুহাত তুলে প্রার্থনা করতেন । দেখা গেছে তার দু'চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি নেমে আসত। মুনাজাতের মাধ্যমে বলতেন হে আমার প্রভু! তুমি আমার আব্বাজানের গোনাহগার উম্মাতদেরকে ক্ষমা করে তাদেরকে জান্নাত দান কর। হে আমার মাবুদ, তুমি আমার পিতার গোনাহগার উম্মাতদেরকে বিচার অতি সদয়ভাবে কর। 

নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইবাদত বন্দেগী সম্পর্কে তার আদরের পুত্র ইমাম হাসান বলেছেন- আমার মা বৎসরের অধিক সময়ই নফল রোজা রাখতেন। আর রাতের কিছু শোভনীয় পরিচ্ছদে দেহাবৃত করে নবী কন্যা হিসেবে মার্জিত হয়ে ভোজ সভয় উপস্থিত হলেন। ভোজ সভায় উপস্থিত হয়ে নবী কন্যা দেখলেন প্রত্যেক রমণীরাই মূল্যবান বেশ ভুষায় সজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠানে দর্শনীয় বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। 

নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) উপস্থিত রমণীদের নব নব সাজে সজ্জিত বেশ ভুষার চাককিক্যের অবজ্ঞা করে বললেন হে রমণীগণ, এসব সাজসজ্জা সবই ক্ষণস্থায়ী। আস আমি তোমাদেরকে পরকালীন স্থায়ী সুখ সম্পর্কে কিছু বলি । এহেন কথা বলেই নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) আল্লহ তায়ালার একত্ববাদের কথা বর্ণনা করে পর লৌকিক স্থায়ী সুখ সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে বর্ণনা করলেন। 

তার মূল্যবান উপদেশ শ্রবণ করে তাদের পৌত্তলিকতার অসারতা অনুধাবন করতে পারল এবং আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ইসলামের মাহাত্ম মর্যাদা উপলব্দি করে ঐ মুহূর্তে অনেকেই ইসলামের অমীয় সুধা গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়। যাই হোক প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) শত ব্যস্ততা ও কার্যের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগীতে কোন সময়ই শৈথিল্য প্রকাশ করেননি। 

বরং সাংসারিক কাজ করে সময় পেলেই জায়নামাযে দাড়িয়ে যেতেন, নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ) বলেন- নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) অভাব অনাটন সাংসারের মধ্যে জীবন যাপন করেও ইবাদত বন্দেগীতে কঠোর সাধনা করেছেন । 

সারা দিনের সাংসারিক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করার পরে স্বামী সন্তান বা যখন নিদ্রার কোলে ঢলে পড়তো পৃথিবী যখন নিরব নিস্তদ্ধ শান্ত হয়ে যেত কোথাও পশু পাখির শব্দ নেই এমনি মুহূর্তে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) আমার অজানে, আমর পাশ্ব হতে উঠে গিয়ে পাক পবিত্র হয়ে হাজির হতেন রাহমানুর রাহীম আল্লহ তায়ালার দরবারে সকলের অজান্তে নীরবে আল্লাহ তায়ালার জিকির করতেন সমস্ত রাত, কেবলই জিকিরই করতেন না। 

তার পিতা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর গোনাহগার উম্মাতের জন্য ক্ষমা চেয়ে দুহাত তুলে প্রার্থনা করতেন । দেখা গেছে তার দু'চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি নেমে আসত। মুনাজাতের মাধ্যমে বলতেন হে আমার প্রভু! তুমি আমার আব্বাজানের গোনাহগার উম্মাতদেরকে ক্ষমা করে তাদেরকে জান্নাত দান কর। হে আমার মাবুদ, তুমি আমার পিতার গোনাহগার উম্মাতদেরকে বিচার অতি সদয়ভাবে কর। 

নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইবাদত বন্দেগী সম্পর্কে তার আদরের পুত্র ইমাম হাসান বলেছেন- আমার মা বৎসরের অধিক সময়ই নফল রোজা রাখতেন। আর রাতের কিছু যাচ্ছেন। গৃহের মেঝের এক কোণে পড়ে আছে যব ও যাতা, আর তার আদরের শিশু পুত্র হযরত হুসাইন দোলনায় শুয়ে নিদ্রা যাচ্ছেন। 

তিনি গৃহের মধ্যে আরও দেখতে পেলেন একজন সুন্দরী অপরিচিত রমনী বসে বসে নবী কন্যা হযরত ফাতেমার যাতা ঘুরিয়ে যব পিষছেন। আর ইমাম হুসাইনের দোলনাটি ভালে তালে দুলছে। আর অন্য একজন রমণী নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কাছে বসে ঠোঁট নেড়ে তসবীহ পাঠ করেছেন। এহেন অবস্থা দেখো মাত্রই আয়মন অবাক হয়ে গেলেন। আর অবাক হবার কথাও যেহেতু এরূপ দৃশ্য। 

আর কখন দেখিনি। তিনি ঐ মুহূর্তেই ছুটে গেলেন হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর পিতার নিকটে। প্রিয় নবী (ষ) হযরত আয়মানের মুখে উক্ত ঘটনা শুনে বললেন আমার আদারের কন্যা ফাতেমা আজ রোজা রেখেছে, সারাদিন সাংসারিক কাজ কর্ম করতে যেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। যার কারণেই মেঝের উপর ঘুমিয়ে পড়েছে। 

আবেদা হযরত ফাতেমা (রাঃ) বিশ্বা প্রভু আল্লাহ তায়াপার অভ্যাস্ত প্রিয় জন বলেই তার দুঃখ কষ্ট আল্লাহ নিজে সহ্য করতে পারেননি বলে তিনি তিনজন ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন তার কাজ কর্ম সম্পন্ন করার জন্য। আল্লাহ তায়ালা কখনোই চান না যে তার প্রিয় ফাতেমা (রাঃ)-এর কষ্ট হউক কিংবা কাজগুলো অসম্পন্ন অবস্থায় পড়ে থাকুক। যার কারণেই তিন জন ফেরেস্তাকে তিনি নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) তিনটি কাজে নিযুক্ত করেছেন। 

প্রিয় নবী (সাঃ)-এর কথা শুনে উম্মে আয়মন অবাক হয়ে গেলেন। বারমহান করুনার আধার আল্লাহ জাল্লাহ শানুর হুকুম আহকাম পপনের মধ্যে দিয়ে তার রেজামন্দি অর্জন করে তার প্রিজন হয়, তাদের সকল কার্যের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই হয়ে যান অর্থাৎ তার সকল কাজ কর্ম, রক্ষনা বেক্ষণ এক মাত্র আল্লাহ ভায়াপর হাতে অর্পিত থাকে। 

আর একথা ও সর্বজন সত্য কথা যারা আল্লাহ তায়ালার হুকুম আহকাম পালনের মধ্যে দিয়ে প্রকৃত ঈমানদাররূপে গণ্য হয় এবং জীবনের প্রতিটি কাজেই আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হয়। তাদের পার্থিব কোন সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে না। বরং তাদের সমস্যার সমাধান কোথা হতে হয়ে যাবে তা ভাবতেও পারবে না। আল্লাহ তায়ালার প্রিয় জন হতে পারলে সকল সমস্যার সমাধান যে আল্লাহ তায়ালা করেসেন তা জলন্ত প্রমাণ বহন করে।