হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 17

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 17

মায়া-মমতা

নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর গোটা জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায় তার অন্তর খানা মোমের মত কোমল ছিল। আগুনের স্পর্শে মোম যেমনিভাবে মুহূর্তের মধ্যে গলে যায় তেমনি নবী দুলালী মায়া মমতার প্রতীক বিপদাপদ বা দুঃখ দুর্দশা দেখা মাত্রই তার হৃদয় খানা মুহূর্তের মধ্যে গলে যেত। মাতা সন্তানের প্রতি যেরূপ মমতাময় তদ্রূপ অসহায় পথহারা পথ ভোলা মানুষেল জন্য ও ফাতেমা ছিলেন মমতাময়ী। 

কেহ কোনরূপ বিপদ আপদে কিংবা দুঃখ কষ্টের মধ্যে নিপিতিত হলেই তার কাছে মাতৃজ্ঞানে ছুটে আসতেন। আর নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) তার শক্তি সামার্থ অনুযায়ী তা মোচন করে দিতেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এমন ও দেখা গেছে ঐ মুহুর্তে তার দুঃখ কষ্ট মোচনের শক্তি সামর্থ নেই বুত্ত তিনি যথার্থ চেষ্টা করতেন। 

সন্তানের দুঃখ কষ্ট দেখা মাত্রই মায়ের হৃদয় যেমনি বেদনার্ত হয়ে উঠে দ্রুপই নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-এর উম্মাতগণের দুঃখ কষ্ট দেখা মাত্রই ব্যাকুল হয়ে যেতেন। 

যার কারণেই নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে সকলে মাতৃরূপে শ্রদ্ধা করে থাকে। একথা সর্বজন বিদিত যে যারা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় জন হয়ে সকলের অন্তরের মাঝে প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্থান পেয়েছে তারা প্রতি হিংসাও ক্রোধ হতে অন্তরকে পবিত্র রাখতেন, অর্থাৎ, প্রতি হিংসা কিংবা, ক্রোধ বলতে তাদের হৃদয়ে কোন বস্তুই ছিলনা। 

নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর অন্তরেও প্রতিহিংসা ও ক্রোধ স্থান পায়নি। কেহ যদি তাকে শত কষ্ট ও দেয় কিংবা তার সাথে অমানবিক কাজ করে তাহলে তা সে আপনা থেকেই মার্জনা করে দিতেন। এমনকি তার দুঃখ কষ্টে বিপদে আপদে সাহায্য করার জন্য এমন ভাবে অগ্রসর হতেন মনে হত যেন সে তাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। নিম্নে এ ধরনের একটি ঘটনার উপনা উপস্থাপন করা হল। 

কোন এক বর্ণনা থেকে জানা যায় শানাউন নামক জনৈক ইয়াহুদী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর প্রতি বেশী ছিল। কিন্তু লোকটি হযরত ফাতেমা (রাঃ) কাছের লোক হওয়া যত্ত্বেও নবী জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে অত্যন্ত শত্রুতা পোষণ করত। শুধু অন্তরেই শত্রুতা পোষণ করতেন তা নয় বরং তাকে বিভিন্ন স্থানে দেয় প্রতিপন্ন করার কৌশল করতেন। 

এক কথায় শামাউল নামক জনৈক ইহুদী রত আলী (রাঃ)-কে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার জন্য মুসলমান হয়ে ছিলেন। কিন্তু তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কারণে তাদের সাথে তাদের পরিবারের সকালেই সম্পূর্ণ রূপে সম্পর্ক করে পেল। এমন কি তার বন্ধু বাস্তব পাড়া প্রতিবেশীর পোক জন ও তার থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করতেন। এহেন পরিস্থিতিতে লোকটি নিজেদের কে খুবই অসহায় মনে করলেন। 

বাস্তবিক পক্ষে তারা পরিবারের কে যে কষ্ট অনুভব করেছে তার চেয়ে বিপদে পড়লেন আর্থিক দিক দিয়ে। কেননা শানাউল ইয়াহুদী থাকা কালীন অনেক ধনসম্পত্তির মালিক ছিলেন। তখন ইচ্ছা অনুযায়ী টাকা পয়সা ব্যয় করতে পারতেন। আর এখন ধর্মান্তরের সাথে সাথে সে ঐ ধর্ম সম্পদ হতে একেবারে বঞ্চিত হলেন। ঐ লোকটির কাছে ঐ মুহূর্তে চলার মত একটি পয়সাও ছিল না। 

এমনি আর্থিক কষ্টের মধ্যে হঠাৎ এক দিন তার স্ত্রী পরলোক গমন করল। স্ত্রী পরলোক গমন করার সাথে সাথে মনেহল যে লোকটির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। লোকটি ভয়ানক বিপদে পড়ে গেল স্ত্রীকে গোসল, দাফন করার জন্য কোন লোক নেই। মৃত লাশ ঘরে পড়ে রইল। নবী দুলালী হযরত ফাতেমার মন মুহূর্তের মধ্যে মোমের মত গলে গেল। তিনি আর ঘরে স্থির থাকতে পারলেন না। 

নবী কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) দাসীর মারফত সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ওড়না দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত করে বাদীকে সাথে নিয়ে নবদীক্ষিত মুসলমনের বাড়ী রওয়ানা হলেন। বাড়ী পৌছেই নবী কন্যা নিজের হাতে ঐ লোকটির স্ত্রীর গোসল করায়ে অতি তাড়াতাড়ি দাফনের ব্যবস্থা করলেন। 

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু চিন্তা করে দেখুন ইহাহুদী লোকটি নবী জামাতা হযরত আলীর (রাঃ) সাথে কতইনা শত্রুতা পোষণ করেছে। আর তার স্ত্রী নবী কন্যা ফাতেমা স্বামীর শত্রুতার কথা মনে না করে যে মহত্বের পরিচয় দিয়েছে তা কি আমাদের ভেবে দেখা উচিত না? অথচ আমরা সেই নবী কন্যা হযরত ফাতেমার পিতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উম্মত হয়ে আমাদের শত্রুদের সাথে কিরকম আচরণ করেছি। 

অথচ একজন মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব হল ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে শত্রুদের মন জয় করা। কেননা পরবর্তী কালে শত্রুই যেন তার আচরণের জন্য আফসুস করে। যাই হোক যহরত ফামেতা (রাঃ)-এর আচারনে ও উত্তম ব্যবহারে ইয়াহদী মুসলমানটি বিস্মিত ও বিহ্বল হয়ে পড়ে ছিল। ইহুদী মুসলমান তার পূর্বের আচারণের জন্য বার বার নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বাঁদীর মারফত তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করল। 

অর্থ আদর্শের প্রতীক নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) প্রথমেই ইহুদী মুসল মানকে বলে দিয়েছিলেন আমার তোমার প্রতি কোন রূপ আক্রোশ কিংবা ক্রোধ নেই। অনেক আগেই তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। 

কিন্তু লোকটি একথা কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। লোকটির মুখ হতে কেবল বের হয়ে আসত আমার মত পাপীকে মনে হয় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন নি । প্রিয় নবীর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা (রাঃ) আমার অতীতের অপরাধের জন্য খাস করে দোয়া করেন। হয়তোবা তারই দোয়ার উসিলায় আমি পর কালে মুক্তি পাব ।