হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 10

হযরত মা ফাতেমা (রাঃ)-এর জীবনী বই - Part 10

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শুভ বিবাহ

নিখিল বিশ্বের ত্রাণকর্তা সুপারিশের কাণ্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর পবিত্র মুখে কথা ও নির্দেশ অনুযায়ী ইসলামের বীর সৈনিক আশেকে নবী হযরত আলী (রাঃ) নবী দুলালী কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শুভ বিবাহের মোহার আদায় করার জন্য খুশী চিত্রে আপন লৌহ বর্ম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কেবল সিদ্ধান্ত নিয়েই থেমে রইলেন না বর্মটি বিক্রি করার জন্য গ্রাহকের সন্ধান করতে লাগলেন। 

অনেক খোজাখুজি করে ও উপযুক্ত গ্রাহক না পেয়ে বর্মটি নিয়ে পরের দিন হযরত আলী (রাঃ) প্রিয় নবীর দরবারে উপস্থিত হলেন । ঐ মুহুর্তে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর দরবারে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) হযরত উমর ফারুক (রাঃ) হযরত উসমান যিন নুরাইন (রাঃ) সহ আর অনেক সাহাবী উপস্থিত ছিলেন। প্রিয় নবী (সঃ) নিজেই উপস্থিত সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন তোমাদের মধ্যে এমন কেহ কি আছ যে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে আলী (রাঃ)-এর বর্মটি ক্রয় করতে পার। 

প্রিয় নবীর (সঃ) কথাশুনা মাত্রই কালবিলম্ব না করে হযরত উসমান (রাঃ) দাড়িয়ে বললেন হে নবী, আমি ৪৮০ দিরহাম মূল্য দিয়ে বর্মটি ক্রয় করতে প্রত্যাশি। হযরত উসমান (রাঃ)-এর কথা অনুযায়ী প্রিয় নবী (সঃ) বর্মটা হযরত উসমান (রাঃ)-এর হাতে দিলেন হযরত উসমান (রাঃ) মনের খুশীতে নগদ ৪৮০ দিরহাম দিয়ে বর্মটি কিনে নিলেন এবং এই অর্থ প্রিয়নবী (সঃ)-এর সামনে রাখলেন। আল্লাহর নবী টাকা নিয়ে হযরত আলী (রাঃ)-এর হাতে দিলেন। 

হযরত আলী (রাঃ) সেই টাকাগুলো দিয়ে বিবাহের যাবতীয় খরচ বহন করেন। এদিকে হযরত উসমান (রাঃ) আনন্দ মুহুর্তে অত্যন্ত খুশী হয়ে হযরত আলী (রাঃ)-কে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার জন্য লোহবর্মটি ফেরত দিলেন। বর্মটি ফেরত দেয়ায় হযরত আলী (রাঃ) খুবই আনন্দিত হলেন। এবং প্রিয় নবী (সাঃ) খুশী হয়ে হযরত উসমান (রাঃ)-কে প্রাণ ভরে দোয়া করলেন। 

আর হযরত বেলাল (রাঃ)-কে আতর ও খোশবু আনার জন্য বাজারে পাঠালেন। কোন বর্ণনা হতে জানা যায়। প্রিয় নবী (সাঃ) হযরত ওমর, সালমান ফারসী, সাদ ইবনে আবী ওক্কাস প্রমুখ সাহাবী (রাঃ)-কে বাজারে পাঠিয়ে বাজার থেকে দুটি বালিশ, একটি পরদা, এক খানা চাদর, দুখানা বাসন দুটি বাজু বদ্ধ, দুটি পেয়ালা এবং একটা মাটির বাসন কিনে আনালেন । এদিকে হযরত আলী (রাঃ) প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনে এনে উপস্থিত হলেন। 

এর পরে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নির্দেশে হযরত আলী (রাঃ)-কে সমজিদের সামনে উপস্থিত করা হল। এর পরে হুজুর (সাঃ) নিজেই মিম্বরে বিবাহের খোতবা পাঠ করলেন। খোতবা শেষ করেই প্রিয় নবী (সাঃ) উপস্থিত মেহমান সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন তোমারা সকলেই জেনে রাখ এবং সাক্ষী থাক যে আমি চারশ দিরহাম মোহরের বিনিময়ে আলী ইবনে আবু তালিবে সঙ্গে আমার কন্যা হযরত ফাতিমাকে বিবাহ দিচ্ছি। 

এরপরে শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বলেন আমি আমার কন্যা ফাতেমাতুজ জোহরাকে চারশ দিরহাম মোহরের বিনিময় তোমার সঙ্গে বিবাহ দিলাম তুমি এতে সম্মতি আছ কি? হযরত আলী (রাঃ) আদবের সঙ্গে উত্তর করলেন আল হামদুলিল্লাহ। আমি কবুল করলাম। এর পরে প্রিয় নবী (সাঃ) উপস্থিত মেহমানদেরকে নিয়ে রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার দরবারে আবেগ জড়ান কন্ঠে প্রার্থনা করলেন এবং দমপতিদের সুখী, হওয়ার জন্য দোয়া করলেন। 

দোয়ার শেষে উপস্থিত মেহমানদের মধ্যে খেজুর বিতরণ করলেন। নবীজির নয়নের মনি হযরত ফাতেমা (রাঃ) শুভ বিবাহের সময় হযরত খাদীজাতুল কোবরা (রাঃ) ছাড়া প্রিয় নবী (সাঃ)-এর যে সমস্ত স্ত্রী ছিলেন তারা সকলেই এই বিবাহের আসবাবপত্র সহ সকল ব্যবস্থা করেন। বিশেষ করে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর বিশেষ নির্দেশে উম্মুল মুমেনীর হযরত আয়েশা (রাঃ) বিবাহের আনুসঙ্গিক কাজে সবচেয়ে বেশী চেষ্টা করেন। 

তিনি ঘর দুয়ার লেপে দেন এবং বিছানা ঠিকঠাক করে দেন, এমনকি নিজ হাতে খেজুরের বাকল ধুনে বালিশ বানিয়ে দেন মেহমানদের সামনে। উম্মুল মু'মেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহ সম্পর্কে বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন আমি ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহের মত এমন সুন্দর ও উত্তম বিবাহ অনুষ্ঠান আমি আর কোথাও দেখিনি ।

স্বামীর ঘরে হযরত ফাতেমা (রাঃ)

হযরত আলী (রাঃ)-এর সঙ্গে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) শুভ বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর প্রিয় নবী (সাঃ) প্রাণ প্রিয় জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-কে আপন হুজরায় নিয়ে গেলেন। হযরত আলী (রাঃ) ও ফাতেমা (রাঃ)-কে একত্রে নিজের কাছে বসালেন এবং প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলে এবং উপদেশ দিয়ে জামাতাকে উত্তম ভাবে মেহমান দারী করালেন। এরপরে নিজের ওযুর পানি জামাতা আলী ও ফাতেমার শরীরে ছিটিয়ে দিলেন। 

তারপর প্রাণ প্রিয় জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-কে নিজের ঘরে হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর সঙ্গে একত্রে রাত্রি যাপন করতে দিলেন। আল্লামা সোলায়মান নদভী (রহ) সাহাবা চরিত্রে বর্ণনা করেন যে বিবাহের পূর্বে হযরত আলী (রাঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সঙ্গে অবস্থান করতেন এবং প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সঙ্গে অবস্থান করতেন এবং বিবাহের পরে হযরত আলী (রাঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-এর ঘরেই অবস্থান করেছেন। 

কোন কোন বর্ণনা হতে জানা যায় বিবাহের পরে হযরত আলী (রাঃ) প্রায় দশ এগার মাস (রাঃ) প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সঙ্গেই অতিবাহিত করেছেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) পিত্রালয়ে থাকা কালীন সাধ্যানুযায়ী স্বামীর খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। মেয়ে ও জামাতার মধ্যে যেন মধুর সম্পর্ক সৃষ্টি হয় সে দিকে প্রিয় নবী (সাঃ) বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতেন । বিবাহের পর হযরত ফাতেমা (রাঃ) পিতার বাড়ীতে প্রায় এগারটি মাস অতিবাহিত করেন।

হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহের সময় ও বয়স

অধিকাংশ সীরাতকারীদের মতে প্রিয় নবী (সাঃ) দ্বিতীয় হিজরী সনে হযরত আলী (রাঃ)-এর সঙ্গে আদরের দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শুভ বিবাহের কার্য সুসম্পূন্ন করেন। তাদের এই পবিত্র বিবাহ মসজিদে নববীতে হয়েছিল। তরকাতে ইবনে সাদ ও খোলাফায়ে রাশেদীনে উল্লিখিত আছে যে শুভ বিবাহের সময় নবী নন্দীনি হযরত ফাতেমাতুজ জুহরার বয়স হয়েছিল কেবল মাত্র ১৪ বৎসর। 

অন্যদিকে শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) বয়স হয়েছিল মাত্র ২৩ বছর। আল্লামা শিবলি নোমান ও সৈয়দ সোলায়মান নদভী (রহ) সীরাতুননবী কিতাবের দ্বিতীয় খন্ডে উল্লেখ করেছেন যে হযরত আলী (রাঃ) যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র একুশ বছর পাঁচ মাস মতান্তরে চব্বিশ বছর।
এর মধ্যে প্রথম মতটিই সর্বাধিক সহীহ ও গ্রহণ যোগ্য। দ্বিতীয় হিজরী সনের ব্যাপারে কার কোন মন্তব্য নেই ।

পতি গৃহে যাত্ৰা

পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে হযরত ফাতেমা (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর পিতৃগৃহেই রয়ে গেলেন । যেহেতু হযরত আলীর (রাঃ) সংসার ছিল না। হযরত আলী (রাঃ) ফাতেমাকে সর্বদা কাছে রাখতে চায় কিন্তু মনে চাইলেও তিনি তাকে নিয়ে রাখবেন কোথায়? তার তো কোন ঘড় বাড়ি নাই। তিনিই থাকেন পরের বাড়ীতে পরের ঘরে। 

হ্যারত আলী (রাঃ) নিজেই চলতে পারেনা তারপর অন্যের চিন্তা কি ভাবে করবে? তার অবস্থা এমন ও হয় যে এক বেলা আহার করেন আর তিন বেলা পেটে পাথর বেধে থাকেন। প্রিয় নবী (সাঃ)-এর আদরের দুলালী কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ) গৃহে এনে তিনি খেতে দেবেন কি? হযরত আলীর (রাঃ) মত হযরত ফাতেমা (রাঃ) তো দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারবে কি? 

সব চিন্তা করে হযরত আলী (রাঃ) নিজেকে অসহায় ভাবছে, তবে অসহায় ভাবার কথাও যেহেতু বিবাহের পর স্ত্রী স্বামীর বাড়ী না থেকে পিত্তালয়ে থাকবেন এটা স্বামীর জন্য খুবই বেদনা দায়ক। যাই হোক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চিন্তা করে হযরত আলী (রাঃ) মানুষীক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও মনে মনে ভাবেন আদরের দুলালী বতুলকে আমার কাছে আনার প্রয়োজন নেই। কেননা সে আমার অভাব অনটনের সংসারে এসে এত দঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারবে না। 

মনে মনে অনেক সংকল্প করলেও ফাতিমা (রাঃ)-এর কথা মনে করলেই তাকে সার্বক্ষনিক কাছে পাওয়ার জন্য মন ব্যকুল হয়ে উঠে। যাই হোক মনের সকল সংকল্প মুছে ফেলে প্রতিজ্ঞা করলেন যেভাবে হোক বতুলকে তার গৃহে আনতেই হবে। শেষ পর্যন্ত হযরত আলী (রাঃ) প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে নিয়ে স্বাধীন ভাবে ঘর সংসার করার জন্য ছোট একটি বাড়ী ভাড়া নিলেন। কিন্তু মনের মধ্যে আশার জাল বনলে ও অতিশয় লাজুক হযরত আলী (রাঃ) প্রিয়নবী (সাঃ)-কে গিয়ে বলতে পারলেন না। 

যে আপনার কলিজার টুকরা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে আপনার কলিজার টুকরা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে আপনার ঘর হতে আমার ভাড়া করা জরাজীর্ণ ছোট বাড়ীতে নিয়ে যাব। অনেক দিন যাবতই হযরত আলী (রাঃ) ফাতেমাকে তার গৃহে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিবেন বলে প্রস্ততি নিচ্ছে কিন্তু লাজুক আলী বলতে সাহসই পাচ্ছেননা। 

কিন্তু মানবতার মহান শিক্ষক দয়ার আধার প্রিয় নবী (সাঃ) আকার ইঙ্গিতে কিছুটা বুঝতে পেরেই একদিন বললেন হে আলী আমার কলিজার টুকরা ফাতেমা (রাঃ) তোমার গৃহিনী তোমার সৌভাগ্যর কারণ হোক। 

প্রিয় নবীর (সাঃ) প্রিয় কথা শুনে ও হযরত আলী মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেন নি। বহু দিন যাবত হযরত আলী (রাঃ) ফাতেমাকে তার গৃহে নিয়ে আসবে এনিয়া চিন্তা ভাবনা করে মন মানুষীক খারাপ করে ফেলছে। 

হযরত আলীর ছোট ভাই আকীল তার ভ্রাতার মনের চঞ্চলতা ও গতিবেগ দেখে বুঝতে পারলেন যার কারণেই একদিন ভ্রাতার হাত ধরে বললেন আমার মনের একান্ত ইচ্ছা আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে নিজ গৃহে বাস করুন। ভ্রাতার কথা শুনে হযরত আলী (রাঃ) প্রিয়নবী (সাঃ)-এর অনুমতির কথা বললেন । 

আকীল ভ্রাতার এহেন কথা শুনা মাত্রই হযরত আলী (রাঃ)-কে নিয়ে উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গৃহে গেলেন । আকীল হযরত আলী (রাঃ) হয়ে সকল কিছু হযরত আয়েশা (রাঃ) আনহার নিকট খুলে বললেন। হযরত আলীর ইচ্ছা ও বাসনার কথাগুলো ভাই হযরত আকীলের মুখে শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রিয় নবীর (সাঃ) দরবারে যেয়ে উপস্থিত হলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) সালাম দিয়ে বললেন, আপনার চাচাত ভাই হযরত আলী (রাঃ) আপনার কলিজার টুকরা নয়নের মনি ও তার স্ত্রী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে নিজের গৃহে নেওয়ার জন্য অভিলাষী হয়েছে। 

কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) অতিশয় লাজুক বলেই ও বিষয়ে আপনাকে জানাবার মত সাহস সঞ্চয় করতে পারছেনা। হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর মুখের কথা গুলো শুনে হযরত আলী (রাঃ)-কে বিশেষ ভাবে তার সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য বললেন। লাজুক হযরত আলী আদরের সাথে তার সামনে বসলেন। হযরত আলী (রাঃ)-কে দেখে প্রিয় নবী (সাঃ) বললেন হে আলী তোমার কি ইচ্ছা যে আমি আমার আদরের দুলালী ও তোমার স্ত্রী ফাতেমা (রাঃ)-কে বিদায় করে দেই। 

হযরত আলী (রাঃ) আদরের সাথে বিনীত ভাবে বললেন হে নবী। হ্যাঁ এটাই আমার আরজ। হযরত আলী (রাঃ)-এর মুখে হ্যাঁ বোধক কথা শুনে প্রিয় নবী (সাঃ) কিছু দিরহাম তার হাতে তুলে দিয়ে বললেন। বাজার থেকে আটা, পনির, ঘি ইত্যাদি কিনে আন । আল্লাহর প্রিয় হাবীব (সাঃ) নিজ হাতে রুটির সঙ্গে পনির ঘি ইত্যাদি মেখে জলীস নামে এক প্রকার খাদ্য তৈরী করলেন এবং উপস্থিত সকলকেই খেতে দিলেন। মাটির একটি পেয়ালাতে অবশিষ্ট জলীস ভরে তিনি বললেন এই টুকু হল আমার কলিজার টুকরা বতুলের এবং তার স্বামীর জন্য। 

এর পরে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নির্দেশ ক্রমে ফাতিমা (রাঃ)-কে উপস্থিত করা হলে তিনি আদরের দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর কপালে চুমু দিয়ে জামাতা হযরত আলী (রাঃ)-এর একটি হাত টেনে নিলেন এবং তার উপর আদরের কন্যা ফাতেমার হাত রেখে বললেন হে আলী তোমার জন্য মাতৃহারা কলিজার টুকরা নয়নের মনি হযরত ফাতিমা কল্যানের কারন হোক, ফাতেমা (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে আবেগ জড়ানো কন্ঠে বললেন হে ফাতেমা তোমার স্বামী আমার জামাতা হযরত আলী (রাঃ) সার্বিক দিক দিয়েই প্রশংসার যোগ্য এখন তোমরা উভয়ে মধুর সম্পর্ক স্থাপন করে নিজ গৃহে বসবাস কর। 

প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নির্দেশ ও দোয়া নিয়ে হযরত ফাতেমা (রাঃ) যখন হযরত আলীর (রাঃ) গৃহে গেলেন তখন প্রিয় নবী (সাঃ)ও তথায় গিয়ে হাজির হলেন। তবে প্রিয় নবী (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে দেখা করার জন্য বলেছিলেন না। যার কারনেই দরজায় দন্ডায়মান হয়ে অনুমতি চাওয়া মাত্রই মুহূর্তের মধ্যে দরজা খুলে গেল এবং তিনি ভিতরে ঢুকে পড়লেন। 

তারপরে একটি পাত্রে পানি নিয়ে আসলেন। প্রিয় নবী (সাঃ) সেই পাত্রের পানিতে তার পবিত্র হাত ডুবালেন এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর বুকে ও বাহুতে পানির ছিটা দিলেন। এর পরে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে তার কাছে ডাকলেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) লজ্জা জড় সড়ো হয়ে পিতার সামনে হাজির হলেন। আল্লাহর নবী তার উপর ও তার পবিত্র হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিলেন এবং বললেন, হে মা ফাতিমা তোমার বিবাহ আমি স্ব-খান্দানে যোগ্য পাত্রের সাথেই দিয়েছি।

উক্ত ঘটনাটি হযরত আসমা বিনতে উমাইস এমনি ভাবেই বর্ণনা করেছেন। নবী দুলালী হযরত ফাতিমার (রাঃ) বাসরের রাতে আমি তাদের বাড়িতে ছিলাম । সকাল বেলা আল্লাহর হাবীব (সাঃ) উপস্থিত হয়ে আমাকে বললেন ভাই আলীকে আমার কাছে উপস্থিত কর। প্রিয় নবীর (সাঃ) এহেন কথা শুনে আমি বললাম ভাইয়ের কাছে কলিজার টুকরা ফাতেমাকে বিবাহ দিলেন কেমন করে? তার কথার জবাবে প্রিয় নবী (সাঃ) বললেন হে উম্মুল আইমান। ঠিক করেছি। 

এর পরে প্রিয় নবী (সাঃ)-এর পবিত্র মুখের কথা ও কন্ঠ শুনে অন্যান্ন মহিলারা সরে দাড়ালেন, তখন আমি ও পর্দার আড়ালে চলে গেলাম । কিন্তু সময় যেতে না যেতেই হযরত আলী (রাঃ) উপস্থিত হলেন। প্রিয় নবী (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) শরীর মুবারকে পানি ছিটিয়ে দোয়া করলেন । তারপরে হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে কাছে ডাকলেন । অত্যান্ত লজ্জায় নত হয়ে নবী দুলালী হযরত ফাতেমা (রাঃ) তার সামনে উপস্থিত হলেন। 

প্রিয় নবী (সাঃ) ফাতেমার (রাঃ) মাথায় হাত রেখে বললেন “মা” ধন্য তুমি । ধীর হও, এরপরে দু হাত তুলে তাদের জন্য প্রাণভরে দোয়া করলেন এবং তাকে বললেন “মা” কখন স্বামীর আদেশ অমান্য বা অবহেলা করনা। তার সুখ দুঃখের সমভাগ হয়ে তার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। “মা” মনে রাখবে, কিয়ামতের দিন মেয়ে লোকদের মধ্যে যে সমস্ত মহিলা দোযখ বাসী হবে তাদের মধ্যে হতে অধিকাংশ মহিলাই হবে স্বামীর আদেশ অমান্য কারিনী। 

সর্বদা একথা স্বরণে রেখে স্বামীর ঘর করবে। যে স্বামীর পদতলেই মেয়েদের বেহেস্ত। আর কোন সময়ই কোন ব্যাপার কিংবা জিনিসের জন্য স্বামীকে চাপ দিবে না। তবে আমি জানি হযরত আলী দরিদ্র ও শিক্ষিত, জ্ঞানী সে কখনই এমন কিছু করবেনা যাতে তুমি তার ব্যবহারে মনে ব্যাথা পাও। আর শত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও সে যেন তোমার হাসি মুখ দেখতে পায়।

“মা” মনে রাখবে। স্বামী যদি স্ত্রীর মুখ মলিন দেখে এতে যে দুঃখ হয় এরূপ দুঃখ আর কিছুতেই পাওয়া যায়না। স্বামীর সঙ্গে সর্বক্ষেত্রেই আদবের সঙ্গে ও হাসি মুখে কথা বলবে। যে স্ত্রীর প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট থাকে সে স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট থাকেন। এহেন উপদেশ মূলক কথাগুলো বলে আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চলে আসলেন।